প্রতিবেশির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে দক্ষিন এশিয়ায় নিজের প্রাধান্য বজায় রাখার প্রয়াসের পাশাপাশি, সাম্প্রতিক সময়ে নানা ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতিকে বৈশ্বিক উন্নয়ন অংশীদারিত্বের অন্যতম প্রধান শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন ভারত বিষয়ক এক আলোচনায় বক্তারা। ওয়াশিংটনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিংস ইনষ্টিটউট আয়োজিত India at the Global High Table: The Quest for Regional Primacy and Strategic Autonomy শীর্ষক বই নিয়ে আলোচনায় বক্তারা এই মন্তব্য করেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত দম্পতি হাওয়ার্ড শেফার ও তেরেসিতা শেফারের লেখা বইটিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে ভারত কিভাবে এগিয়ে চলছে, অন্যান্য বিশ্ব পরাশক্তিসমূহের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কিভাবে দেশটির কৌশলগত ও পররাষ্ট্রনীতি বিবর্তিত হচ্ছে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
বইতে যে চারটি বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয় তা হচ্ছে, ভারতের অনন্যতা, তার জোট-নিরপেক্ষতা ও কৌশলগত অবস্থান সুদৃঢ় রাখার প্রয়াস, আঞ্চলিক প্রাধান্য বজায় রাখার প্রচেষ্টা এবং অতি সম্প্রতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
রাষ্ট্রদূত হাওয়ার্ড শেফার বলেন ইন্দিরা গান্ধীর আমল থেকেই ভারতের পরিবর্তন লক্ষনীয়। ধীরে ধিরে উন্নতি লাভ করতে থাকে দেশটির অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রযুক্তিসহ অন্যান্য খাত।
“১৯৯০ এর পর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ভারতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটা অবস্থানে নিয়ে আসতে থাকে”।
এ্যাম্বাসেডর তেরেসিতা শেফার্ড ভারতের সামাজিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি শিক্ষা ও প্রযুক্তিখাতের উন্নয়নকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির অবস্থান শক্ত করার অন্যতম নিয়ামক হিসাবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন প্রতিবেশী পাকিস্তান পারমানবিক শক্তিধর হওয়া স্বত্বেও দক্ষিন এশিয়ায় ভারতই প্রধান সুপারপাওয়ার। পশ্চিমা বিশ্ব, যুক্তরাষ্ট্র, চীন রাশিয়াসহ অন্যান্য শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন: “অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ভারতের জন্যে হয়তো আরো উজ্জল ভিবষ্যৎ রয়েছে”।
আর সে উজ্জল ভিবষ্যৎ নিশ্চিত করার প্রয়াসে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এই দুই দেশের মধ্যে যদি ভারতকে কোনো একটিকে বেছে নেয়ার বিকল্প দেয়া হয় তাহলে কাকে নেবে সে প্রশ্নে রাস্ট্রদূত তেরেসিতা হাওয়ার্ড বলেন:
“ভারতের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধিতে দুই দেশেরই ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ন। দুইয়ের মধ্যে ভারত কোনো একটি দেশকে বেছে নিতে চাইবে না। তবে একটি বিষয় বলা যায় তা হচ্ছে চীনের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ে বাঁধা রয়েছে; যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তা নেই”।
১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন হাওয়ার্ড শেফার। বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক তখন কেমন ছিল আর এখন কেমন সে প্রশ্নে তিনি বলেন।
এরশাদের আমলে তখন স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল, তবে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক সবচেয়ে ভাল থাকে বাংলাদেশে আওয়া্মী লীগ ক্ষমতায় থাকলে। এখনো তাই। খুব ভালো এবং শক্তিশালী সম্পর্ক এখন দু দেশের মধ্যে। এখন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বেড়েছে যাকে শেখ হাসিনা বলছেন কানেক্টিভিটি।
রাষ্ট্রদূত হাওয়ার্ড বলেন ভারত চায় আওয়ামী লিগ সরকার ক্ষমতায় থাকুক। তাই অর্থনীতিসহ তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সকল ধরনের সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে।
একটি বিষয় বিশেষভাবে বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বহুদেশের সঙ্গে ভারতের পার্থক্য হচ্ছে ভারত চায় কোনো সমালোচনা ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকুক। ২০১৪ সালে যেভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন হয়েছিল তারও তারা কোনো সমালোচনা করেনি।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ষ্টিফেন পি কোয়েনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র বিভাগের সাবেক দক্ষিন এশিয়া বিভাগীয় প্রধান ওয়াল্টার এ্যান্ডারসন ও কার্নগি এনডোওমেন্ট ফর ইন্টাররন্যাষশনাল পিস এর সিনিয়র এ্যাসোসিয়েট এশলি জে টেলিস।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা