ঢাকা : ইউনিয়ন পরিষদের তৃতীয় ধাপে কারচুপি, কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে ৬১৪টির ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোট শেষে চলছে গণনা। একাধিক অভিযোগে ১২ ইউপির ভোট স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত তৃণমূলের ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
তৃতীয় ধাপের গোলযোগ-সংঘর্ষ ও সহিংসতা কম হলেও অনিয়ম অব্যাহত থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা থেকে অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, মানিকগঞ্জ, নোয়াখালী, শেরপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় অনিয়মের তথ্য কমিশনে এসেছে। দৃশ্যমান গোলযোগ-সহিংসতা না হলেও দখল-অনিয়ম বহাল রয়েছে। এতে সুন্দর ভোটের আশায় গুড়েবালি বলা চলে।
নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর বার্তায় আমরাও ভালো ভোটের প্রত্যাশা করেছি। কিন্তু দলীয় নেত্রীর মনোনয়নের বাইরে গিয়েও যারা ব্রিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তারা তো গোলযোগ করেই যাচ্ছে। সেখানে এমন পরিস্থিতি হচ্ছে কোথাও কোথাও।’ তবে যেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে সেখানে কেন্দ্র স্থগিত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের আশ্বাস পেয়ে আমরা মনে করেছিলাম- ব্যালট পেপার ছিনতাই, সংঘর্ষ কিছুটা কম হবে। তাদের নেতাকর্মীরা অনিয়মে জড়াবে না। আমরাও সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু দেখছি- উল্টো। ঝামেলা তো করেই যাচ্ছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা ভয়ে থাকলে কিংবা অনিয়মের প্রকৃত চিত্র না পাঠালে আমরা কি করি! প্রশাসন সহায়তা না করলে স্বাধীন সংস্থা কাগজে-কলমে থাকে। এক্ষেত্রে সবার আন্তরিক সহযোগিতাও দরকার।’
এদিকে শনিবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। তারা উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাইন ধরেছে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টে যেতে শুরু করে ভোটের চিত্র। একের পর এক কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটতে থাকে। কোথাও কোথাও ভোটাররা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে না পেরে ফিরে ব্যর্থ মনোরথে বাড়ি ফিরে যান। তাদের অভিযোগ, তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের খবরে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মীদের ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ব্যালট পেপারে অবাধে সিল মারতেও দেখা গেছে।
অন্যদিকে বিএনপি’র পক্ষে একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে এসে নির্বাচনে অনিয়ম সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সিইসির কাছে।
গত ২৩ এপ্রিল ৬৮৫টি ইউপিতে ভোটের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছিলো ইসি। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারায় রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের ৫৩ ইউপি’র ভোট ষষ্ঠ ধাপে নেয়া হয়েছে। নানা অনিয়ম-জটিলতায় আরো একডজন ইউপি’র ভোট বাদ যায়। ফলে শনিবার ৬১৪ ইউপির ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
এ ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে ২ হাজার ৬৭২ জন। সাধারণ সদস্য পদে ২০ হাজার ৯৪৩ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬ হাজার ২৯৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রয়েছে। তৃতীয় ধাপে ৬১৪ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী ১ হাজার ৪৮৭ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ১ হাজার ১৮৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ মোট ১৪টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এসব ইউপিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৫ জন। সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্রে লক্ষাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও দেড় লাখের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছে।
ছয় ধাপে সাড়ে ৪ হাজার ইউপিতে ভোটের জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা হয়। ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের ভোটের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়ে তৃণমূলের ইউপি নির্বাচন।