শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই ভোট চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এসব ইউনিয়নে শনিবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে।
আগের দুই ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও প্রাণহানির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজকের ভোট নিয়েও জনমনে আশঙ্কা রয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, আগের দুই ধাপের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও বেশি সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্বাচনে অনিয়ম বন্ধের তাগিদ দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতাকর্মীদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তবে অন্যদের তুলনায় সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায় বেশি।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম দুই ধাপে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত অনেকের বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে। ভবিষ্যতেও কমিশনের এ ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।’
দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় পরিচয়ে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ প্রায় ২০টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা রোধে ইসিকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বিএনপির অভিযোগ, ইসির নির্লিপ্ততার কারণে অনিয়ম সহিংসতা ঠেকানো যাচ্ছে না।
প্রথম দুই ধাপের ভোটের দিনের সহিংসতাসহ এ পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় ৪০ জনেরও বেশি লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। ইসি বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের অভিযোগে প্রথম ধাপে ৬৫টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৩৭টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। যদিও প্রথম দুই ধাপের বেশিরভাগ কেন্দ্রেই অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি : তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় ইসি থেকে ৬৮৫ ইউপির তালিকা ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারায় রাঙামাটি ও বান্দরবানের ৫৩ ইউপির ভোট তৃতীয় ধাপ থেকে ষষ্ঠ ধাপে নেওয়া হয়েছে।
আইনি জটিলতায় আরও কয়েকটি ইউপির তফসিল স্থগিত হয়ে গেছে। তাই আজ ৬১৭ ইউপিতে ভোট নেওয়া হবে। এই ধাপে অংশ নিয়েছেন চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী দুই হাজার ৬৭২ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২০ হাজার ৯৪৩ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ছয় হাজার ২৯৮ জন।
তৃতীয় ধাপেও ভোটের আগেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের অন্তত ২৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৭৪ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭৯ জন বিজয়ী হয়েছেন। এসব ইউপিতে মোট ভোটার এক কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৫ জন। ভোটের দিন সাড়ে ছয় হাজারের বেশি কেন্দ্রে লক্ষাধিক ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেড় লাখের মতো সদস্য নিয়োজিত থাকছেন।
তৃতীয় ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান পদে মোট ১৪টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছে এক হাজার ৪৮৭ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এক হাজার ১৮৫ জন। এতে আওয়ামী লীগের ৬১৭, বিএনপির ৫৩৬, জাতীয় পার্টির ১৬৭, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ২৬, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ১২, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৯২, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ১০, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির পাঁচ, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের তিন, জাতীয় পার্টির (জেপি) তিন, খেলাফত মজলিসের দুই, বিকল্প ধারার তিন, বাসদের এক ও অন্যান্য দলের চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রথম দুই ধাপের ফল :প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক এ ইউপি নির্বাচনে মূল লড়াই চলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। গত ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭১২ ইউপির ও দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ ৬৩৯ ইউপির ভোট হয়। এতে আওয়ামী লীগ এক হাজার একটি ইউপির চেয়ারম্যান পদে ও বিএনপি ১০৮ ইউপির চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়। ২১৮ ইউপিতে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ইসির হিসাবে প্রথম ধাপে ৭৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইসির তফসিল অনুযায়ী চতুর্থ ধাপে ৭ মে, পঞ্চম ধাপে ২৮ মে ও ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ভোট নেওয়া হবে।