দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৈঠকে অংশ নেয়া কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, বৈঠকের প্রধান এজেন্ডাই ছিল শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা চক্রান্তের ব্যাপারে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সরকারের অভিযোগের বিষয়টি। ফলে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের সম্ভাব্য কারণ ও প্রেক্ষাপটসহ নানা দিক নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেছেন নেতারা। বৈঠকে বিএনপি নেতারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। যেখানে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যেসব তথ্য তুলে ধরেছেন তার বিপরীতে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করার ব্যাপারে মতামত ওঠে আসে। সূত্র জানায়, শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের ঘটনায় বৈঠকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেন সিনিয়র নেতারা। এর মধ্যে এ ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করতে একটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তার আগেই পুরো ঘটনা বিশ্লেষণ এবং ওই সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করবে বিএনপি। এছাড়া এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে এফবিআইকে চিঠি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এ বিষয়ে এফবিআই বাংলাদেশ সরকারকে কি তথ্য দিয়েছে বা এ সম্পর্কিত কি ধরনের তথ্য রয়েছে তা জানাতে অনুরোধ জানানো হবে। চিঠিটি শফিক রেহমানের আইনজীবীর মাধ্যমেও দেয়া হতে পারে। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে নেতারা বলেছেন- প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিক শফিক রেহমান দুইজনই দ্বৈত নাগরিক। এক্ষেত্রে মার্কিন দূতাবাস ও বৃটিশ হাইকমিশনের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে মার্কিন দূতাবাস ও বৃটিশ হাইকমিশনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে দলটির কূটনৈতিক ইস্যুতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতারা। সেই সঙ্গে শফিক রেহমানকে আইনি সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তার পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য দলের আইনজীবী নেতাদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হয়। সরকার দ্রুত এই মামলার কার্যক্রম শেষ করতে আদালতকে প্রভাবিত করছে বলেও বৈঠকে নেতারা মন্তব্য করেন। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের ওপর মামলা-হামলা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে যত প্রতিকূল পরিস্থিতিই আসুক ইউপি নির্বাচনের লড়াইয়ে থাকছে বিএনপি। সরকারি দলের লোকজনের নৈরাজ্য, প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ ও নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ত আচরণের মাধ্যমে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে সরকারের মুখোশ উন্মোচন হোক সেটা চায় বিএনপি। এ ছাড়া বিএনপি প্রমাণ করতে চায় বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিএনপি নির্বাচনে থাকার সিদ্ধান্তে অটুট রয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, কলেজছাত্রী তনু হত্যা, শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ-সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন করা যায় কিনা সে ব্যাপারেও নেতারা আলোচনা করেছেন। তবে বৈঠকে কর্মসূচি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।