এক জায়গায় এসে স্থির দাঁড়িয়ে ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি। ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাওয়া বিরোধীদের শোরগোল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আগেই। সরকারও ধরপাকড়ে কিছুটা লাগাম টেনেছিল। একে একে জামিন পাচ্ছিলেন বিরোধী প্রভাবশালী নেতারা। বিএনপি ইউপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত আর সরেনি। এক দিনে আদালতে হাজির হয়ে ৫ মামলায় জামিন পান খালেদা জিয়া। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নামও ঘোষণা হতে শুরু হয় ধীরে ধীরে। এরইমধ্যে মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব আর সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কমিটিতে তরুণ নেতাদেরই প্রাধান্য দিয়েছেন খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটিতেও প্রাধান্য পায় নতুন নেতৃত্ব।
কিছু সামাজিক ইস্যুতে তোলপাড় তৈরি হলেও সরকার তা ভালোভাবেই সামাল দিতে সক্ষম হয়। বাঁশখালীর ঘটনা দক্ষতার সঙ্গে ট্যাকল করে প্রশাসন। ইলিশের ভিড়ে হারিয়ে গেছে তনু হত্যাকাণ্ড ইস্যুটিও। এ অবস্থাতেও দুটি বিষয় অনেকের মাথা ব্যাথা তৈরি করে। ১. ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে সরকারের তীব্র সমালোচনা করা হয়। বিশেষ করে ক্রাইসিস গ্রুপের রিপোর্ট পশ্চিমা দেশগুলোর নীতিগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঢাকায় চাউর আছে, জেনারেল মইন রাষ্ট্রক্ষমতা নিতে চাইলেও ক্রাইসিস গ্রুপের নেতিবাচক রিপোর্টের কারণেই তা নিতে সক্ষম হননি। ২. বিএনপি সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে উঠুক তাও অনেকে দেখতে চান না। মূলত এ দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই নতুন করে বিরোধীদের ওপর ক্র্যাকডাউন শুরু হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এমএ মান্নান সুপ্রিম কোর্টের আদেশে মেয়র পদে ফেরার সুযোগ পেলেও তাকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাড়িতে অগ্নিসংযোগের তাজা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও প্রথমে বলা হয়েছিল, ওই গাড়িতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লেগেছে। প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার বিরোধী শিবিরে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করেছে। প্রখ্যাত এই সাংবাদিক অনেকদিন ধরেই বিএনপিকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছিলেন। সর্বশেষ তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয় দেখভাল করছিলেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বিএনপির পক্ষ থেকে যারাই কূটনীতিকদের সঙ্গে সংযোগের কাজ করছিলেন তাদের কারও কারও ওপর হামলা হয়েছে। কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চাপের মুখে কেউ কেউ বিএনপি ত্যাগও করেছেন। এরই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ শিকার হতে পারেন শফিক রেহমান।
৮২ বছর বয়স্ক শফিক রেহমান বাংলাদেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান সাংবাদিকদের একজন। তিনি বিবিসিতে কাজ করেছেন। টিভি উপস্থাপক হিসেবেও পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। তবে শফিক রেহমানের সবচেয়ে বেশি পরিচিতি সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেই। এরশাদের জমানায় বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল পত্রিকাটি। একইসঙ্গে ঝড় তুলেছিলেন শফিক রেহমান। তাকে নির্বাসিত জীবন বেছে নিতে হয়। প্রবীণ এ সাংবাদিককে রিমান্ডে নেয়া অনেকেই মধ্যে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
বিএনপির পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং সাংবাদিক শওকত মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরেই কারাগারে আটক রয়েছেন। এক মামলায় জামিন হলে তাদের আবার নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এরইমধ্যে খবর চাউর হয়েছে, বিরোধী শিবিরের ওপর আরেক দফা ক্র্যাকডাউন চালানো হবে। বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী এবং দলটিকে যারা নানাভাবে সহযোগিতা করে থাকেন তাদেরকেও গ্রেপ্তারের বাইরে রাখা হবে না। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য। বিরোধীরা ভয়ে থাকলে শাসনে সুবিধা হয়।