পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রও গতকাল সমকালকে জানায়, শিগগিরই একাধিক বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। এ ছাড়া বিএনপিপন্থি কয়েকজন ব্যবসায়ীও গ্রেফতার হতে পারেন। এরই মধ্যে তাদের গ্রেফতারের ব্যাপারে নীতিনির্ধারণী মহল থেকে ‘সবুজসংকেত’ পাওয়া গেছে। তারা যাতে পালাতে না পারেন, সে ব্যাপারেও সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো চাঙ্গা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে-পরে সারাদেশের নাশকতার ঘটনায় যেসব মামলার তদন্ত এখনও সম্পন্ন হয়নি, তাও দ্রুত শেষ করতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় পুলিশের অপরাধ সভায় মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নাশকতার মামলার তদন্ত অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করতে এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের চিঠি দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
২০১৫ সালে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে সারাদেশে নাশকতার অভিযোগে এক হাজার ৭৭৫টি মামলা হয়। এখনও অধিকাংশ মামলার চার্জশিট হয়নি। এসব মামলার বেশির ভাগ আসামি হচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা তদন্তাধীন অন্তত দুই হাজার ৩১১টি নাশকতার মামলার তদন্ত শেষ করতে বিভিন্ন সময় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে সাংবাদিক শফিক রেহমান ছাড়াও আরও দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন রাজনীতিক ও একজন ব্যবসায়ী। এরই মধ্যে এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে যে তিনজনের সাজা হয়েছে, তাদের সঙ্গে আরও তিন বাংলাদেশির জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, ২০১৩ সালে রাজধানীতে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা ৪২টি মামলার অধিকাংশের তদন্ত শেষ হয়নি। কিছু কিছু মামলা এরই মধ্যে থানা থেকে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ‘কৌশলগত’ কারণেই দীর্ঘ সময় হেফাজতের মামলার নড়াচড়া ছিল না। শিগগির হেফাজতের মামলার তদন্তে গতি পাচ্ছে। এসব মামলায় বিভিন্ন সময় হেফাজতের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীসহ অন্তত ৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের অনেকে এখন জামিনে রয়েছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, হেফাজতের মামলায় অনেক আসামি। প্রতিটি মামলায় আসামির সংখ্যা কয়েকশ’। তাদের সবার নাম-ঠিকানা সঠিকভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে।
হেফাজতের তা বের ঘটনায় দায়ের করা সব মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের ব্যাপারে পুলিশ রহস্যজনক কারণে নির্বিকার। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফরিদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবু, তাজুল ইসলাম, আবুল মালেক হালিম, মোস্তফা আজাদ, মুফতি নুরুল আমিন, শাখাওয়াত হোসেন, আতাউল্লাহ আমিন, গোলাম মহিউদ্দিন একরাম, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ফজলুল হক জিহাদী, নেজামে ইসলামের সাহিত্য সম্পাদক মুফতি হারুন ইজাহার, হেফাজতে ইসলামের অর্থ সম্পাদক মাওলানা ইলিয়াছ ওসমানী, নূর হোসেন কাসেমী, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাহফুজুল হক, আবদুল কুদ্দুস, নুরুল ইসলাম, আবুল হাসনাত আমিনী, শেখ লোকমান হোসেন, মুফতি শায়দুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম মাদানী, শামসুল হক, মনির হোসেন মুন্সী, আবদুল কাদের প্রমুখ। রাজধানীসহ সারাদেশে হেফাজতের তা বের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছিল।