রাষ্ট্র পরিচালনা করে সরকার। আমাদের সরকার গনতান্ত্রিক। নিঁখুত গনতান্ত্রিক মানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার। এর চেয়ে নিরেট ও স্বচ্ছ গনতন্ত্র রাষ্ট্র বিজ্ঞানেও নেই। তাই আমরা গর্বিত।
১৯৭৫ সালে বন্ধবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও গনতন্ত্রকে নৃশংসভাবে খুন করেছেন কুলাঙার মুশতাক ও তার দল। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাণ পুরুষ ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে খুন করে আমাদের কপালে খুনের তিলক লাগিয়ে দিয়েছে কুলাঙাররা। এর পর আরেকজন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ও খুন করা হয়েছে। এরপর স্বৈরাচার উপাধি নিয়ে ক্ষমতা দখলকারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আমরা তাড়িয়ে দিয়ে গনতন্ত্র উদ্ধার করেছি। এতে সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। বিরোধী দল আওয়ামীলীগ নির্বাচন নিরপেক্ষ হয় নি বলে কারচুপির অভিযোগ করে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় থাকার জন্য ৪৮ আসনে বিনাভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে আওয়ামীলীগ ছাড়া একট সরকার গঠন করে। আওয়ামীলীগ আন্দোলন করে বিএনপি কে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে। তখন বিএনপি অভিযোগ করেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।
২০০১ সালে বিএনপি ও ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। অভিযোগ একই ধরণের পারস্পরিক আক্রমনাত্বক। কিন্তু এর মাঝে দুই নেত্রী একটি অসাংবিধানিক সরকারের অধীন কারাভোগ করেন। জাতির প্রত্যাশা ছিল এবার গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু বিধি বাম। এমন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে যে আর ভোটেরই প্রয়োজন হচ্ছে না। ৯৬ সালে বেগম জিয়া ৪৮ আসনে বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে গনতন্ত্রকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগ বিএনপির তিনগুনেরও বেশী ১৫৩ আসনে একই কায়দায় সাংসদ বানিয়ে নির্বাচনের আগেই সরকার তৈরী করে রাখে। ফলে গনতন্ত্র খুন হয়ে যায়।
এখন সাবেক সরকার পরিচালনাকারী দল বিএনপির অংশ গ্রহন ছাড়া আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে চলছে দেশ। চলছে গনতন্ত্র। সামনে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তবে ১৫৩ এর তিনগুনের বেশী আসনে বিনাভোটে সাংসদ করতে হতে পারে। তাহলে প্রায় ৫০০ আসনে বিনাভোটে সাংসদ লাগবে। কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা যে, বিএনপি যা করতে পারে তা আমাদের নেই। মানে আমাদের আসনই হল ৩০০। মানে চলমান গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আরো ২০০ এর মত আসন বাড়াতে হবে। যদি তাই হয় তবে গনতন্ত্রের কবর রচনা হয়ে যায়। লাশ দাফন ওশেষ হয়।
বর্তমানে আওয়ামীলীগের একক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চিত্র বলার প্রয়োজন নেই। এটা সকলের জানা। সিটিকরপোরেশন নির্বাচন ও ইউপি নির্বাচন বলে দিচ্ছে গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ কেমন আছে। তবে নিঁখুত গনতেন্ত্রর বলি প্রায় অর্ধশত মানুষ। তাদের কি অপরাধ ছিল তা এখনো জানা হয়নি। শুধু এই টুকু জানা গেছে তারা ভোট দিয়ে উৎসব করতে চেয়েছিলেন। এটাই তাদের অপরাধ ছিল। অন্যদিকে স্বৈরাচার ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে নিয়ে সরকার পরিচালনা করলেও অপরাধ হচ্ছে না। আর এই দুই দলকে সঙ্গে নিয়েই চলছে আমাদের নিঁখুত গনতন্ত্রের অগ্রযাত্রা।
সম্প্রতি উচ্চ আদালত ভোটে নির্বাচিত দুই জন জনপ্রতিনিধিকে সরকার কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত করাকে সাময়িকভাবে স্থগিত রেখে কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবে না তা জানতে রুল জারী করেছেন। কিন্তু আইনীভাবে তারা ক্ষমতা ফিরে পেলেও বাস্তবে রয়েছেন কারাগারে। তারা হলেন রাজশাহী সিটি মেয়র মোছাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান। জনপ্রতিনিধি হওয়ার অপরাধে তারা বারবার গ্রেফতার হচ্ছেন।
পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, জনগন ভোট দিয়ে ওই দুই জনকে বিপদে ফেলেছেন। যদি ওনারা ভোটে না যেতেন আর ভোটাররা ভোট না দিতেন তবে হয়ত তারা গ্রেফতার হতেন না। তাহলেই মনে হয় ভোট ও ভোটের মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকত।
আমরা এরশাদের সময় দেখেছি ভোটের আগেই ভোট শেষ। কেন্দ্র ছাড়া বিভিন্ন দিকে বসে বসে সিল মেরে ভোট শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু যাই হউক ব্যালট বাক্স কেন্দ্রে আসছে। খালি বা বোঝাই হয়ে। কিন্তু বিএনপি ও আওয়ামীলীগ বিচ্ছিন্নভাবে ভোট ছাড়াই ভোট শেষ করে ফেলছে। আবার আওয়ামীলীগ ভোট পাওয়ার অপরাধে জনপ্রতিনিধিকে বারবার গ্রেফতারও করছে। তাহলে তুলনামূলক ভাবে স্বৈরাচারী এরশাদের ভোটের চিত্র ভাল ছিল বলতে হবে। কারণ ভোট ছিনতাই আর আগাম বাক্স বোঝাই যাই হউক এরশাদ ৩০০ আসনে নির্বাচন দিয়েছেন। আর এখন ভোট তো লাগছেই না এমনকি ভোট দেয়া ও পাওয়ার অপরাধে খুন ও গ্রেফতার হতে হচ্ছে। তাহলে এরশাদকে ধন্যবাদ দিতে সমস্যা কোথায়। কেউ না দিলেও এরশাদ ধন্যবাদ নিয়ে যাচ্ছেন এতে মনে হয় তেমন ঝামেলা হচ্ছে না।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম