ঢাকা : আগামী মঙ্গলবার নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রাথমিক নির্বাচন নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন প্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটন ও বার্নি স্যানডার্সের মধ্যে চলছে তুমুল প্রতিযোগিতা। ভোটে হিলারি এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে নেই বার্নি। তার ছাপ পাওয়া গেলো ভোটের আগে বৃহস্পতিবারের শেষ বিতর্কে। তারা উভয়ই প্রবলভাবে আক্রমণ করেছেন একে অন্যকে।
প্রাথমিক নির্বাচনের শুরুতে হিলারি এবং বার্নির প্রতিযোগিতা এতোতা তীব্র ছিল না। বার্নি স্যানডার্স ৪০ বছর যাবত মার্কিন রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। যে কারণে বেশিরভাগ মানুষ তার সম্বন্ধে জানতে পেরেছেন এই প্রথম।
অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটন সাড়া বিশ্বে পরিচিত একটি নাম। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী ছিলেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। মার্কিন বড় বড় কোম্পানির সাথে তার সুসম্পর্ক। এই সুসম্পর্ক প্রয়োজন হয় নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চালাতে গেলে। তাছাড়া মূল ধারার মার্কিন গণমাধ্যমগুলোও চালায় আসলে বিলিয়ন ডলার করপোরেশান। হিলারি সমর্থন প্রথম থেকেই বেশি। যে কারণে প্রেসিডেন্ট দৌড়ের শুরুতে ধরেই নেয়া হয়েছিল হিলারির জয় নিশ্চিত
সেই নিশ্চয়তা এখন আর নেই। কারণ প্রচলিত গণমাধ্যমের সমর্থন না পেলেও ইন্টারনেট এবং মার্কিন তরুণ সমাজের কল্যাণে বার্নি স্যানডার্স দৌড়ে প্রায় ধরে ফেলতে যাচ্ছেন হিলারি ক্লিনটনকে। তার জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এটা হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, তিনিই একমাত্র মার্কিন মধ্যবিত্ত সমাজের কথা বলছেন এবং বিত্তশালীদের রাজনীতির চত্বর থেকে সরাতে চাইছেন।
হিলারি ক্লিনটনের সাথে তার এখানেই নীতিগত পার্থক্য। তাদের বিতর্কগুলোতে এই বিষয়গুলোই উঠে আসছে বারবার। এবারের বিতর্কে তারা কথা বলেছেন ওয়াল স্ট্রিট ব্যাংক, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন, এবং কর্মজীবী মানুষের সর্বনিম্ন বেতন এবং পররাষ্ট্র নীতি প্রশ্নে।
তাছাড়া বার্নি গত ৮টি প্রতিযোগিতার ৭টিতেই জয় পেয়েছেন। ফলে চলে এসেছেন একেবারে সামনের সারিতে। যে কারণে তার প্রতি হিলারির আক্রমণও ছিল কঠোর। ডেমোক্র্যাটিক বিতর্কগুলো থেকে রিপাবলিকানদের বিতর্কের পার্থক্য রয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা ব্যক্তিগত আক্রমণ করে না। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের এই বিতর্কে তাও হয়েছে।
হিলারি ক্লিনটন অবশ্য অনেক ইস্যুতে আগে থেকেই বার্নিকে খোঁচাতেন। অবশেষে তিনি মুখ খুলতে শুরু করেছেন। গতকালের বিতর্কে বার্নি বলেন, ‘সেক্রেটারি ক্লিনটনের কি প্রেসিডেন্ট হবার অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিমত্তা আছে? অবশ্যই আছে। কিন্তু আমি প্রশ্ন তুলছি তার বিচারবোধ নিয়ে।’
হিলারি ক্লিনটন ইরাক যুদ্ধ, পানামা বাণিজ্য চুক্তিসহ অনেক বড় বড় ইস্যুতে যে পক্ষে একসময় সায় দিয়েছেন তার অনেকগুলোই পরবর্তীতে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে দেখা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের জন্য। হিলারি তার নীতিগত অবস্থানও বদলেছেন অনেকবার, যেটা বার্নির ইতিহাসে নেই। নীতিগত দিক থেকে তার কাছে তার অবস্থান সব সময়ই পরিষ্কার।
অনেক বিশ্লেষকদের মতে, বার্নি স্যানডার্সের এই উত্থানের পেছনে তার রাজনৈতিক স্বচ্ছতাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি কোন কোম্পানি থেকে অর্থ নেন ণী। তার ক্যাম্পেইনে গড়ে ২৭ ডলার করে অর্থ দিয়েছে সাধারণ জনগণ। সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে তার বিশাল অঙ্কের ফাণ্ড।