বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) বেঁধে দেওয়া নিয়ম ‘যথাযথভাবে’ অনুসরণ করার পাশাপাশি গ্রাহকদের তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করারও নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
ফলে বায়োমেট্রিকে সিম নিবন্ধন চলতে আর কোনো আইনি বাধা রইল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এ পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হওয়া এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণসহ এই রায় দেন।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিটিআরসির দেয়া ১১ দফা নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বায়োমেট্রিকে নিবন্ধনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার জন্য গ্রাহকের আঙুলের ছাপ নেয়ার ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা এবং এর অপব্যবহার ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কার্যক্রমের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ৯ মার্চ হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিটটি করেন আইনজীবী এসএম এনামুল হক।
রিটে বলা হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় নাগরিকের আঙ্গুলের ছাপগ্রহণ করে তা সংরক্ষণ করা হলে এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। কিন্তু বেসরকারি মোবাইল কোম্পানির মাধ্যমে নাগরিকের আঙ্গুলের ছাপগ্রহণ করে তা সংরক্ষণ করা হলে ভবিষ্যতে নাগরিকের ব্যক্তিগত সুরক্ষা লঙ্ঘিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কারণ দেশের একমাত্র মোবাইল কোম্পানি টেলিটক ছাড়া বাকি সব মোবাইল কোম্পানির ৯৭ ভাগ শেয়ার হোল্ডার বিদেশি।
রিটে আরও বলা হয়, আঙ্গুলের ছাপ (ডেটা) সংরক্ষণের বিষয়ে দেশে কোনো আইন নেই। তাই আগে আইন হওয়া উচিত। তারপর ডেটা সংরক্ষণ করা দরকার। নয়তো এসব কোম্পানিগুলো থেকে তথ্য চুরি হয়ে দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসীদের হাতে গিয়ে এর অপব্যবহার হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ১৪ মার্চ ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদলত রুল জারি করেন। রুলে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কার্যক্রম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। গত রোববার ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আদালত মঙ্গলবার রায়ের দিন ধার্য করেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ব্যারিস্টার রেজা-ই রাকিব। মোবাইল ফোন অপারেটরদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ফাতেমা আনোয়ার।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিম নিবন্ধন, অ্যাক্টিভেশন ও ভেরিফিকেশনের জন্য আঙ্গুলের ছাপ বাধ্যতামূলক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিটিআরসি। এরপর ১৬ ডিসেম্বর থেকে সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙ্গুলের ছাপ না দিয়ে নতুন সিম বিক্রিও বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি দেশব্যাপী বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুরনো সিমের পুনঃনিবন্ধন কার্যক্রমও শুরু করা হয়; যা চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি।