ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভারতের কেরালায় মারা গেছেন কমপক্ষে ১০৫ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৫০ জন। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত রাতে কেরালার কোল্লামে অবস্থিত পুত্তিঙ্গল মন্দিরে আতশবাজির উৎসব থেকে এ আগুনের সূত্রপাত। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে তিনটার দিকে আগুন মন্দিরটির সবকিছু পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। রাতের আকাশ আগুনের শিখায় আলোকিত হয়ে ওঠে। বহু দূর থেকে দেখা যায় সেই শিখা। এ সময় চারদিকে ভয়াবহ এক আতঙ্ক বিরাজ করে। মন্দিরে আটকে পড়া মানুষের আর্ত চিৎকারে সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। মুহূর্তেই ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এ খবর। ছুটে যায় উদ্ধারকারী দল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চ্যান্ডি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। অনেক চেষ্টার পর যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ততক্ষণ পুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৮৩ জন। কেরালার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ ছেনিথালা বলেছেন, রাত সাড়ে তিনটায় আগুনের সূত্রপাত। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অনলাইন এনডিটিভি তার লাইভ আপডেটে জানাচ্ছে, এ ঘটনার তদন্ত করা হবে সমন্বিতভাবে। ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিএস শিবকুমার বলেছেন, আহত প্রতিটি মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, আহতদের ৮৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে ট্রিবান্দ্রুম মেডিকেল কলেজে। সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ১৩টি মৃতদেহ। ওদিকে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সেখানে জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগের জন্য কয়েকটি ফোন নম্বর চালু করা হয়েছে। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চ্যান্ডি বলেছেন, ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে। এখন যারা বেঁচে আছেন তাদেরকে সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা দেয়াই হলো সরকারের উদ্দেশ্য। তিনি উদ্ধার অভিযানে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় নরেন্দ্র মোদি আহতদের জরুরি ভিত্তিতে হেলিকপ্টারে করে স্থানান্তরিত করে চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। শিগগিরই তার কেরালায় যাওয়ার কথা রয়েছে। তিনি নিহতদের প্রতি পরিবারকে ২ লাখ রুপি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। গতকাল কেরালায় যেসব দলীয় কর্মকাণ্ড ছিল তা বাতিল করেছেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, মন্দির প্রাঙ্গণেই একটি ছাউনির নিচে রাখা ছিল আতশবাজি। একপর্যায়ে তাতে আগুন ধরে তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ থেকে ওই মন্দিরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে মন্দিরের ভিতরে যে জায়গা ছিল তা ছিল উন্মুক্ত। মন্দিরে আতশবাজির উৎসব পালনের অনুমতি দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন কোল্লাম জেলা কালেক্টরেট এ শাইনামোল। বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের মতে, মন্দির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশ এরই মধ্যে একটি মামলা করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিকট শব্দে আতশবাজির স্তূপে আগুন ধরে যায়। তা বিস্ফোরিত হয়ে সৃষ্টি হয় এক ভয়াবহ দৃশ্যের। মুহূর্তেই মন্দিরের কনক্রিটের ছাদ ধসে পড়ে। ধসে পড়া ছাদের কিছু অংশ এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, উপকূলীয় এ শহরে বিষ্ণু নতুন বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল উৎসব।