জজের স্বাক্ষরের পর খালেদার গ্রেফতার আদেশ তামিল করবে পুলিশ

Slider বাংলার আদালত

02

 

নাশকতার মামলায় হুকুমের আসামি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। অনেক আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরই গ্রেফতার করা হলেও হতে পারে। আদালতের এই গ্রেফতারি আদেশ মহানগর দায়রা জজের স্বাক্ষরের পর তা আসামির ঠিকানায় পাঠানো হবে। তারপর পুলিশ সে আদেশ তামিল করবে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা নাশকতার মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে বুধবার এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা। আদেশে পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা গ্রেফতার হয়েছেন কিনা, তা পুলিশকে ২৭ এপ্রিল জানাতে বলেছেন আদালত। অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের বিষয়ে আদালতের আদেশ তাদের কাছে এখনো পৌঁছেনি। তিনি বলেন, ‘এগুলো সাধারণত মন্ত্রণালয়ে আসে না। তবে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ পেলে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। আইনে যা বলা হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অবশ্য প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গণমাধ্যমে দেখলাম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে হলে বেশ কিছু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এতে সময় লাগবে। তবে বাংলাদেশে অসম্ভব বলেও কিছু নেই।’ তবে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হোক বা না হোক, তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি আদেশ জারি হওয়ার পর দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা দেখা দিয়েছে। বিএনপির কাউন্সিলের পরপরই এ রকম একটি আদেশ দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোবলে চিড় ধরিয়েছে বলে মনে করছেন দলের সংশ্লিষ্টরা। নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, দলীয় চেয়ারপারসনকে মানসিক চাপে রাখতেই এই গ্রেফতারি আদেশ জারি করা হয়েছে। আদালতসূত্র জানান, কোনো আসামি যদি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা মোকাবিলায় আদালতে উপস্থিত না হন, তখন ওই আসামিকে আদালতের মুখোমুখি করার জন্য তাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও আদালত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছেন। আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এখন আদালতের আদেশ মোতাবেক পুলিশ খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করবে। এটি হচ্ছে আইন ও পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া। খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে পলাতক দেখানো হয়েছে। তিনি কখনই পলাতক ছিলেন না। প্রতিদিন মিডিয়ায় আসছেন, অফিস করছেন, বাসায় যাচ্ছেন। সেখানে বিষয়টি পরিষ্কার, মিথ্যা অভিযোগে এ মামলা। তাকে হেয় করতেই এ মামলা করা হয়েছে। আমরা অবশ্যই আইনিভাবে লড়ে যাব। তা ছাড়া বিষয়টি যেহেতু রাজনৈতিক তাই রাজনৈতিক কর্মসূচিও চলছে। অঙ্গ সংগঠনগুলো বিক্ষোভ-প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও কর্মসূচি দেব।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আবু গত রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেহেতু অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে সেহেতু তা তামিল হবে। নিয়ম অনুযায়ী ওয়ারেন্ট যাবে আসামির ঠিকানায়। তবে ওয়ারেন্টের পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক দিন লাগবে জানিয়ে পিপি বলেন, জজ সাহেব ওয়ারেন্ট আদেশে স্বাক্ষরের পর পুলিশ সে আদেশের কপি নিয়ে যাবে এবং তা তামিল করবে। তিনি বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নেওয়ার পর আসামি আদালতে হাজির না হওয়ায় ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আইনের স্বাভাবিক নিয়ম হলো, কারও বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তা কোর্ট থেকে থানায় আসে। তারপর আসামিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। আদালতে না গেলে তাকে গ্রেফতার করতে পারে পুলিশ। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এখনো সংশ্লিষ্ট থানায় বিষয়টি আসেনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়ও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। তা থানায় আসতে অনেক দেরি হয়। আর এ মামলা জামিনযোগ্য। চেয়ারপারসন নিম্ন আদালতে গেলে জামিন হয়ে যাবে। তবে সরকার চাইলে তাকে গ্রেফতারও করতে পারে। সরকারের ইচ্ছার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। বিএনপি-প্রধানের মামলা রাজনৈতিক। তাই এটা আইনের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও মোকাবিলা করা হবে।’ খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে চাপে রাখতেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ নিয়ে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। কারণ, যখন বিএনপির কমিটি ঘোষণা হচ্ছে তখন ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) মানসিক চাপে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দল। আর গ্রেফতারি পরোয়ানা আইনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পুলিশ চাইলে ওয়ারেন্ট ছাড়াই কাউকে গ্রেফতার করতে পারে। এখন সব কিছুই নির্ভর করবে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।’ প্রসঙ্গত, এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকা তিন নম্বর বিশেষ আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ার জারি হয়েছিল। কিন্তু নানা নাটকীয়তার পর সে আদেশ খালেদা জিয়ার ঠিকানায় দূরের কথা তিনি যে থানা এলাকায় থাকেন সেই গুলশান থানা পর্যন্তও পৌঁছেনি। –

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *