বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ফিলিপাইনের সিনেটের শুনানিতে অংশ নিতে প্রতিনিধি পাঠানোর এ সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে দেশটিকে জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সহায়তা নেওয়া হচ্ছে সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) জন গোমেজের। গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় শুনানিতে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের অর্থ ফেরত দিতে চেয়েছেন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং। এছাড়া
অং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, যার ভিত্তিতে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক শাখায় হ্যাকারদের পাঠানো ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আটকে রাখার অনুরোধের পরও তা ছাড় করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত শুনানিতে উপস্থাপন করবে। তিনি আরও জানান, অর্থ ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্ট গ্রুপ ও এপিজি সহায়তা দিতে রাজি আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের যখন যা করণীয় তা করা হচ্ছে। শুনানিতে কারও কারও দায় চিহ্নিত হওয়ায় চুরির অর্থ ফেরতের আশা বাড়ছে। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অংয়ের অর্থ ফেরত দিতে চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের রিপোর্টের বাইরে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বিচারবিভাগীয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব এলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিক্রিয়া জানাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক নিয়মে অর্থ ফেরত পেতে হলে দায় চিহ্নিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ইতিমধ্যে ফিলিপাইনের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ সেখানকার একাধিক পক্ষের দায় চিহ্নিত করায় দেশটিতে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার উদ্ধারের আশা দিন দিন বাড়ছে। মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো ও তার এক সহকারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সিনেটের প্রথম শুনানিতে অংশ নিয়ে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান ফিলরেম এক কোটি পেসো বাংলাদেশকে ফেরত দিতে চেয়েছে। দ্বিতীয় শুনানিতে অংশ নিয়ে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং উল্লেখযোগ্য অংশ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অংয়ের অর্থ ফেরতের প্রতিশ্রুতি নিয়ে অস্পষ্টতা :গত মঙ্গলবারের শুনানিতে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং তার কাছে থাকা অর্থ ফেরত দিতে চেয়েছেন। তবে কী পরিমাণ অর্থ তিনি ফেরত দিতে চান তা নিয়ে ফিলিপাইনের গণমাধ্যমগুলোর খবরে বিতর্ক রয়েছে। ইনকোয়েরার লিখেছে, কিম অং চীনা ব্যবসায়ী গাওয়ের কাছে থেকে পাওনা বাবদ ৯৭ লাখ ডলার, নগদ হিসেবে তার কাছে যাওয়া ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং তার ক্যাসিনোতে জুয়ার চিপস কেনার পর অবশিষ্ট ৮ লাখ ৬৩ হাজার ডলার ফেরত দিতে চান। ব্লুমবার্গ ও এএফপির খবরেও একই তথ্য দেওয়া হয়েছে। এসব অঙ্ক একসঙ্গে করলে দাঁড়ায় ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১২২ কোটি টাকা। তবে ম্যানিলা টাইমস, ফিলিপাইন স্টারসহ কিছু পত্রিকায় অং ৪৬ লাখ ডলার ফেরত দিতে চান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে শুনানিতে উপস্থিত থাকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্বব হলেও নেটওয়ার্কজনিত সমস্যার কারণে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে তাকে এসএমএস পাঠিয়ে উত্তর পাওয়া যায়নি।