প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচন বিকৃত

Slider জাতীয়

7524_b1

 

প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে বিকৃত নির্বাচন অভিহিত করে নাগরিক সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ বলেছে,  এ নির্বাচনে সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি গণমাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমাদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হলেও কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। গতকাল রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সুজন আয়োজিত ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন: দৃশ্যপট ও শিক্ষণীয়’- শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সুজনের পক্ষ থেকে এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে   উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম, সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ব্যাপক সহিংসতার মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৭১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ৩৬টি জেলায় অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ৩২টিতেই সহিংসতা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনের দিনেই বিভিন্ন ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১১ জন এবং আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। অনিয়মের কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয় ৬৫টি কেন্দ্রে। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচনের পরের দুইদিনে ও নির্বাচনের দিনে আহত আরও তিনজনসহ নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৬ জন। আহতদের মধ্যে শতাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন বলে জানা গেছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের পূর্বেই সারা দেশের অনেক এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১০ জন এবং আহত হয়েছেন দুই সহস্রাধিক। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৭ এবং আহত সাড়ে তিন হাজারেরও অধিক। তবে, ২২শে মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটলেও ২৩শে মার্চ টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলাধীন ১১টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি  অনেক স্থানের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন, বাধা দান, কেড়ে নেয়া বা ছিঁড়ে ফেলার কারণে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। কেউ কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাপ সৃষ্টির কারণে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। ছোটখাটো বা সংশোধনযোগ্য ত্রুটির কারণে যাচাই বাছাই কালে বাতিল হয়ে গেছে অনেকের মনোনয়নপত্র। ফলে একদিকে যেমন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ব্যাপকহারে (৫৪টি) ঘটেছে, অন্যদিকে ব্যাপক সংখ্যক ইউনিয়নে (১২১টি) বিএনপির প্রার্থী না থাকার ঘটনা ঘটেছে। দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন তথা সরকারের ভূমিকা অপরিহার্য। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সদাচরণও অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দায় নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে মনে রাখতে হবে যে, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তারাই। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা তাদেরই দায়িত্ব। আমরা সকলেই মনে করি যে, নির্বাচন কমিশনকেই এ  দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা সকলকে এও মনে করিয়ে দিতে চাই যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রণীত আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল পবিত্র সংবিধানে ‘গণতন্ত্র’কে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আর নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ। তাই কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন পদ্ধতিকে ধ্বংস হতে দেয়া যাবে না।

প্রথম দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে একটি বিকৃত নির্বাচন বলে অভিহিত করে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ নির্বাচনকে বিকৃত বলার প্রধান তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এতকাল মনোনয়ন বাণিজ্য ছিল উপরের তলায়, এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য তৃণমূলে ছড়িয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এবারের নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা নিকট অতীতের সকল নির্বাচনের সহিংসতার মাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবার আশঙ্কা প্রকট। এবারের নির্বাচনে সহিংসতার ধরনও ভিন্ন। আগে নির্বাচনের দিনে সহিংসতা ঘটতো, কিন্তু এবার সহিংসতা দীর্ঘমেয়াদি এবং সহিংসতা দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের মধ্যে বেশি। তৃতীয়ত, নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন, কিন্তু এবারের নির্বাচন ছিল প্রায় প্রতিযোগিতাহীন। নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের যে হার তাই এ নির্বাচনকে বিকৃত নির্বাচন বলাই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কমিশন বলেছে তারা ব্যর্থতার দায় নেবে না। এখন কমিশন যদি দায় না নেয় এ দায় কে নেবে?

জাকির হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা দেখেছি কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের যে মহোৎসব দেখা দিয়েছে তা একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার প্রভাবের কারণেই ঘটেছে। সুতরাং আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়বদ্ধতার পরিচয় দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *