দিল্লির বিকাশপুরীতে দাঁতের একজন চিকিৎসক পঙ্কজ নারাং খুনের সঙ্গে বাংলাদেশীদের জড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২৩শে মার্চ ওয়ার্ল্ড টি-২০ ম্যাচকে কেন্দ্র করে হত্যা করা হয়েছে ওই চিকিৎসককে। এ জন্য সরাসরি বাংলাদেশীদের দায়ী করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এ হত্যায় বাংলাদেশীরা জড়িত বলে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। তারা এ ইস্যুতে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, যদিও দিল্লির পুলিশ শনিবার ওই হত্যাকা-ে সাম্প্রদায়িকতার কোন লেশমাত্র নেই বলে দাবি করেছে। এ খবর দিয়েছে দ্য হিন্দু ও অন্যান্য মিডিয়া। পুলিশ বলছে, বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনায়ও হত্যা করা হয় নি ওই দাঁতের ডাক্তারকে। এতে কোন বাংলাদেশী জড়িতও নয়। তবে যে ঘটনায় ওই ডাক্তারকে হত্যা করা হয়েছিল তাতে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকই জড়িত। কিন্তু রোববার ডানপন্থি সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ওই ডাক্তারকে হত্যার জন্য দায়ী অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীরা’। এ সংগঠনের জাতীয় আহ্বায়ক বিনোদ বনসাল বলেন, যেহেতু ডাক্তার নারাং ছিলেন একজন হিন্দু তাই কোন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি তার পরিবারকে দেখতে আসেন নি। অন্যদিকে দাদ্রিতে আখলাকের বাসভবনে রাজনীতিকদের লাইন পড়ে গিয়েছিল। উল্লেখ্য, গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে দিল্লির দাদ্রিতে মোহাম্মদ আখলাকের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। তাকে প্রহার করে হত্যা করা হয়। বিকাশপুরীতে দাঁতের ডাক্তারকে হত্যার জন্য এরই মধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচ শেষ হওয়ার পর অভিযুক্ত নাসির ও একজন কিশোর উত্তম নগরের উদ্দেশে যাত্রা করে। সেখানে গিয়ে তারা ওই ডাক্তারের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে হত্যা করা হয় ওই ডাক্তারকে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলছেন, আমাদের তদন্ত বলছে যে অভিযুক্তদের বেশির ভাগই ওইদিনের ম্যাচ দেখেছে এবং তারা ভারতের বিজয় উদযাপন করেছে। তাই আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে, ডাক্তারের সঙ্গে তাদের যে বাকবিত-া সৃষ্টি হয় তা খেলা নিয়ে নয়, যদিও এ নিয়ে সামাজিক মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এ হত্যাকা-ের অভিযুক্ত একজন পালিয়ে আছে। পুলিশ এখন তাকে খুঁজছে। ওদিকে ডাক্তার নারাংয়ের বাসভবনের কাছেই বস্তি এলাকায় এক ধরণের হিম আতঙ্ক। যারা এ নিয়ে গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে পুলিশ। অন্যদিকে এরই মধ্যে শহরের দাঁতের চিকিৎসকরা বিক্ষোভ করছেন এই হত্যাকা-ের। রোববার তারা মোমবাতি মিছিল করেছেন। ইন্ডিয়ান ডেন্টাল এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীণ বর্মা বলেছেন, ডাক্তার পঙ্কজ নারাং ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। তাই আমরা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাই তার পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেয়ার। পাশাপাশি তাদের ক্ষতিপূরণ ও সুরক্ষা নিশ্চিতের আবেদন জানাই। দিল্লি ডেন্টাল কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সদস্য অনীল চান্দনা বলেন, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সব চিকিৎসকের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এই হত্যাকা-। এক্ষেত্রে পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে। আইন শৃংখলা আরও শক্তিশালী করতে হবে। তবে এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়া উচিত হবে না।