ঝুঁকি জেনেও তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেলের ডিপো!

Slider জাতীয়

 

2016_03_28_13_29_08_dFkE3Mqq2r9ZiLtR6ABIMwDgFPfWI4_original

 

 

 

 

ঢাকা : মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে ধসে যাওয়ার শঙ্কা জেনেও ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের প্যাকেজ-১ এর আওতায় মেট্রোরেলের ডিপোর মাটি উন্নয়নে কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নিয়োগও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে।

এই টাকার মধ্যে ২৫ ভাগ বাংলাদেশ সরকারের আর ৭৫ ভাগ টাকা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা)। প্রকল্প বাস্তবায়নে জাইকারও অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন শুধু কাজ শুরুর পালা। আগামী বছর এপ্রিলের মধ্যে ডিপোর মাটি উন্নয়নের কাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে গত বছরের ২৭ এপ্রিল ডিপো নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ডিপো এলাকায় মাটি উন্নয়ন কাজে মাটির গুনগত মান ভাল নয় জেনেও এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করায় মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। তবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বলেছেন, মাটির সক্ষমতা তৈরি করেই ডিপোর মাটি উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে।

ডিটিসিএ’র অপর একটি মহল বলেছেন, যদি সঠিকভাবে ডিপোর মাটির গুণগত মানোন্নয়ন করা না হয়, তাহলে এতে করে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারা বলেছেন, ঝুঁকি কমাতে বাড়াতে হবে ভূমিকম্প সহনীয়তার ক্ষমতা। মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ৫৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে উত্তরার রাজউক ৩ নম্বর প্রকল্পের ১৬ নম্বর সেক্টরে চিহ্নিত জায়গায় মাটির গুণগত মান খুবই খারাপ।

এ সম্পর্কে বুয়েট এর পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. সামছুল হক  বলেন, ‘সাগরের ওপরও ডিপো হতে পারে। দেবে গেলেও কাজ করা যাবে। মাটি ভাল হলে ডিপো তৈরিতে কম খরচ হবে, আর মাটি ভাল না হলে খরচ বেশি হবে। মাটি যতটুকু ভার বহন করতে পারবে, ততটুকুই কাজ করা সম্ভব। তাতে ঝুঁকির কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

তিনি আরো বলেন, ‘ভূমি উন্নয়নের সক্ষমতা তৈরি করেই মেট্টোরেল প্রকল্পের ডিপোর মূল কাজ শুরু হবে। এতে ঝুঁকির কোনো সম্ভবনা থাকবে না। এর বাইরে কাজ করতে গেলে ঝুঁকি থাকবেই। মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ধ্বসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভূমিকম্প সহনীয়তার শক্তিও অনেক কম। এজন্য ডিপোর মাটির গঠন উন্নয়নে গত বছর এপ্রিলে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। যাচাই-বাছাই শেষে টোকিও কনস্ট্রাকশনকে ঠিকাদার হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

এদিকে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।

এ ব্যাপারে মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক মো. মোফাজ্জেল হোসেন এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি  বলেন, ‘গতকাল (রোববার, ২৭ এপ্রিল) আপনাকে যে বক্তব্য দিয়েছি আজকে (সোমবার ২৮ মার্চ) তার বাইরে কিছু বলার নেই । মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণে যে পরিমাণ জমি দরকার ঢাকার ভেতরে তা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে উত্তরাতে ডিপো নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে জমির গুণগত মান খারাপ হওয়ায় বুয়েটের মতামত নেয়া হয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সেন্ড পাইলিং ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি জানান, মেট্রোরেলের ডিপোর মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয় ২০১৪ সালে। তবে পরীক্ষা শেষে মাটির গুণগত মান ভালো না আসায় পরামর্শ চাওয়া হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাছে। যাচাই-বাছাই শেষে বুয়েট জানায়, উত্তরার মাটি অনেক নরম। এতে ডিপো নির্মাণ করলে যেকোনো সময় তা দেবে যেতে পারে। এছাড়া মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে ধসে যেতে পারে পুরো ডিপো। তাই ডিপো এলাকার মাটির শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। রাজউকের কাছ থেকে অধিগ্রহণকৃত ৫৪ একরের মধ্যে প্রায় ৩০ একর জমির ৮০-১২০ ফুট মাটি তুলে ফেলতে হবে। এরপর প্রথমে সেন্ড পাইলিং করতে হবে। এক্ষেত্রে বালি ফেলে শক্তিশালী হেমার দিয়ে পিটিয়ে তা লেভেলিং (সমান) করা হয়। এরপর ভালো মানের মাটি দিয়ে উপরের অংশ ভরাট করতে হবে। আর বাকি ২৪ একর এলাকায় নিচের দিকের মাটি কিছুটা শক্তিশালী হলেও অনেকাংশেই ফাঁপা। এক্ষেত্রে উপরি ভাগে ৩০-৪০ ফুট মাটি তুলে ফেলতে হবে। এরপর হেমার দিয়ে পিটিয়ে নিচের ফাঁপা অংশ ভরাট করতে হবে। তার ওপর ভালো মানের মাটি ফেলতে হবে। মাটির সক্ষমতা তৈরি করেই ডিপো করা হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি  জানান, আগামী এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের শুভ উদ্বোধন করবেন।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশের মেট্রোরেলের রুট এবং শব্দদূষণ বিষয়ক অভিযোগ প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠকসহ দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর কর্তৃপক্ষের সম্মতি নিয়েই মেট্রোরেলের রুট চূড়ান্ত করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘মেট্রোরেল রুটে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দ ও কম্পন নিরোধক সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। শব্দ প্রতিরোধে দেয়ালে স্থাপন করা হবে নয়েজ ব্যারিয়ার। এর ফলে শব্দের মাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে যাবে এবং মেট্রোরেলের চলাচলের কারণে এ এলাকায় বিদ্যমান শব্দের তীব্রতা কোনো ভাবেই বাড়বে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *