ঢাকা: কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে নাট্যাঙ্গনের মানুষেরা। তাদের মতে, যেকোন মূল্যে এই পাশবিকতা ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার সরকারকে করতেই হবে। তনু হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশের নাট্যকর্মীদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।
রোববার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এই দাবী জানান নাট্যকর্মীরা।
এসময় গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী বলেন, তনু হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের নাট্যকর্মীদের আন্দোলন চলতেই থাকবে। আমরা কোন হুমকি ধমকিতে ভীত নই।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, সন্তানহারা মা যেন সঠিক বিচার পায় রাষ্ট্রের কাছে এটাই আমাদের চাওয়া। সকল রকমের বর্বরতা ও নৃশংসতার দূরীকরনের জন্য আসুন আমরা একটি জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করি।
পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা বলেন, তনুকে নিয়ে আজ আমি একটি পথনাটক লেখা শুরু করেছি। প্রায় সিংহভাগ লেখার পর আমার মনে প্রশ্ন জাগছে যেখানে দেশের সাফল্যগাঁথা নিয়ে নাটক লিখার চিন্তা করেছিলাম সেখানে কেন তনুকে নিয়ে নাটক লিখতে হচ্ছে, পেট্টোলবোমায় মানুষ মরছে এসব নিয়ে নাটক লিখতে হচ্ছে। এসব কষ্টের বিষয় নিয়ে নাটক লিখতে গেলে খুবই খারাপ লাগে।এই বাংলাদেশতো আমরা চাইনি।
তিনি বলেন, তনুর হত্যাকাণ্ডের পর প্রশাসন ও গণমাধ্যমের নীরবতা আমাদের নাট্যকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীদেরকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
ড. ইনামুল হক বলেন, তনুদের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের থিয়েটারের সাথে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল। তার সাথে আমি ছবিও তুলেছি। তার মৃত্যু ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে স্বাধীনতার এতো বছর পরেও এখনও আমরা বর্বর রয়ে গেছি। তনুসহ দেশের সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, তনুর মৃত্যুতে একটি স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে, একটি মানবতার মৃত্যু হয়েছে। যারাই অপরাধ করুক এবং যেখানের মানুষই অপরাধ করুক আমরা অবশ্যই এর বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা উন্নত হলেও সভ্যতা ও মানবিকতার দিক থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। মানুষের চিন্তার বিকাশ ও মানবিকতার উন্নয়ন না ঘটাতে পারলে এদেশ দূর্বৃত্তের দেশে পরিণত হবে।
প্রতিবাদসভায় তিনি কাল মঙ্গলবার টিএসসি’তে জোটের আয়োজনে প্রতিবাদসভাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষনা দেন।
ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, তনু ছিলো আমাদের শিল্পী বন্ধু। আমাদের দেশ উন্নত হচ্ছে এবং আরো উন্নত হবে কিন্তু আমাদের মানবিকতা ও মানসিকতার উন্নয়ন হবে কিনা এ নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, তনু আমার কন্যা, আমার বোন। আমাদের কন্যা ও বোনের জন্য আমাদের যতটা দরদ ও ভালোবাসা রয়েছে তনুর জন্য এবং এদেশের সকল নারীর জন্য আমাদের ততটুকু দরদ ও ভালোবাসাই থাকা দরকার।
তিনি বলেন, ৬০এর দশকে এই জনপদে যেই কথা বলা হয়েছিলো স্বাধীনতার ৪৫বছর পরে আজকে আবারও এই জনপদে সেই একই কথা বলতে হচ্ছে, এর চেয়ে লজ্জাকর আমাদের জন্য আর কিছুই হতে পারেনা। এসময় তিনি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তনু হত্যাকান্ডের বিষয়টি এনে দ্রুত রায় প্রদানের জন্যে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
নিজ নিজ নাট্যদলের নাটক মঞ্চায়নের আগে দুই মিনিট সময় নিয়ে তনুসহ দেশের সকল হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ার জন্য সকল নাট্যকর্মীদের প্রতি তিনি আহবান জানান।
প্রতিবাদ সমাবেশে দেশের অগণিত নাট্যকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে নাট্যকর্মীরা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভ মিছিলটি শিল্পকলা একাডেমি থেকে কাকরাইল মসজিদ হয়ে বেইলী রোডের মহিলা সমিতিতে গিয়ে শেষ হয়।