ঢাকা : পরিবর্তনের কথা বললেও এবারের কাউন্সিলে নিজেদের প্রথা ভাঙতে পারেনি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। কাউন্সিলের পর জল্পনা-কল্পনা, কবে হচ্ছে নতুন কমিটি? সুনির্দিষ্ট করে দায়িত্বশীল নেতারা তারিখ বলতে না পারলেও সকলের চলতি মাসের মধ্যেই মহাসচিব বা স্থায়ী কমিটি অথবা দুটো ঘোষণা আসবে বলে তারা আশা করছে।
সদ্য সমাপ্ত ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে বরাবরের মতো এবারো মহাসচিব বা সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের নতুন সদস্যদের নাম ঘোষণা করেনি। কাউন্সিল অধিবেশনের আগে তাদের নিজস্ব রীতি অনুযায়ী চেয়ারপারসন এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে কাউন্সিলে অনুমোদন হয়।
তবে কউন্সিলে আগতদের অধিকাংশের প্রত্যাশা ছিল কাউন্সিল অধিবেশনে অন্তত নতুন মহাসচিবের নাম জানা যাবে। কিন্তু সে আশায় পুরোটাই গুঁড়েবালি। অনেকটাই ক্লান্ত মনে ফিরে গেছে আগতরা। সন্দেহ দানা বেঁধেছে, তাহলে কি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হচ্ছেন না? না, নিরাশ হওয়ার কারণ নেই। সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়ে আছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই ভারমুক্ত হবেন।
তবে দেরি কেন? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে নানান ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র বলছে, ওয়ান ইলেভেনের সময় নেত্রীর (খালেদা জিয়া) বিপক্ষে গিয়ে যে গ্রুপটি স্বাক্ষর করেছিল আর যারা নেত্রীর পক্ষে ছিল, এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে যে মানসিক দ্বন্দ্ব চলছিল কাউন্সিলকে ঘিরে সেই ক্ষতচিহ্নটা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।
মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সংস্কারপন্থীরা সমর্থন দেয়ার কারণে কট্টরপন্থীরা তার বিরোধীতা করে আসছে। একপর্যায়ে সব পক্ষ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব পদে মেনে নেয়। তারপরও মির্জা ফখরুল অনুসারীদের মানসিক চাপে রাখতে একটা পক্ষ কাজ করেছে। কাউন্সিলের দিন মহাসচিবের নাম ঘোষণা হলে গণ্ডগোল হতে পারে এ আশঙ্কা থেকে নাম ঘোষণা হয়নি।
গন্ডগোলের আঁচ কাউন্সিলের আগের দিনে পাওয়া যায় কিছুটা। দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরমের এক সদস্য এবং অঙ্গদলের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কাউন্সিল ভেন্যুতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। অপর এক নীতি নির্ধারণী ফোরামের সদস্যের সঙ্গে দলের এক সহ সাংগঠনিক সম্পাদকের অসহিষ্ণু মনোভাব দেখা গেছে। সর্বসম্মতভাবে মির্জা ফখরুলকে নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলেও কাউন্সিলের দিনে মহাসচিব হিসেবে ফখরুলের নাম ঘোষণা না হওয়া ফখরুল বিরোধীদের এক ধরনের ‘জেদ’ পূরণের বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কাউন্সিলে মহাসচিব বা স্থায়ী কমিটির নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করার পক্ষে মত দেন।
যেহেতু কাউন্সিল সব ক্ষমতা চেয়ারপারসনকে দিয়েছে তাই ‘ঠান্ডা মাথায়’ কমিটি গঠনের জন্য বিএনপি প্রধানের প্রতি আকুল আবেদন জানায় কাউন্সিলরদের কেউ কেউ। সূত্র মতে, আগে স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে পরে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সঙ্গে মহাসচিব ঘোষণা হবে।
আরেকটি সূত্র জানায়, মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটির ঘোষণা একসাথেই আসবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রফিক সিকদার আশা প্রকাশ করেন চলতি মাসের মধ্যেই বিএনপির নতুন কমিটির মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটির নাম ঘোষণা হবে।
কাউন্সিলের জন্য যে উপ-কমিটি গঠন হয়েছে তার একজন আহ্বায়ক আব্দুস সালাম।
নতুন নেতাদের নাম ঘোষণায় দেরি হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দিতে না পারলেও কাউন্সিলকে সফল দাবি করে তিনি বলেন, ‘নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাউন্সিল সফল হয়েছে। জায়গার অভাবে আমাদের রুদ্ধদার বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। আমাদের অভ্যন্তরীণ বক্তব্য গণমাধ্যমকর্মীরাও প্রচার করছে।’
আব্দুস সালাম বলেন, ‘কাউন্সিল চেয়ারপারসনকে ক্ষমতা দিয়েছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে।
২৫ মার্চ অথবা ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বিএনপির নতুন কমিটির কিছু নেতাদের নাম ঘোষণা হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।