ঢাকা : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন আগামী ২০ মার্চ। ৮৬তম জন্মদিনে রাতের ডিনার পার্টিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এখনও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জানানো হয়নি।
ওইদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ডিনারের আয়োজন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্রটি বুধবার গণভবনে পৌঁছানো হয়েছে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দল এবং দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, দলীয় সংসদ সদস্য, আমলা, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ডিনার পার্টিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
রওশন এরশাদ ওই অনুষ্ঠানে যাবেন কি না, জানতে চাইলে রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমি নিজে গিয়ে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছি। আশা করি তিনি আসবেন। তবে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যদি দেশের বাইরে চলে যান তাহলে আসতে পারবেন না।’
বিএনপির চেয়ারপারসনকে এরশাদের ডিনার পার্টিতে আমন্ত্রণ জানানোর গুঞ্জন থাকলেও এখন পর্যন্ত তা জানানো হয়নি।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপিকে এখনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কারণ তারা এখন কাউন্সিল নিয়ে ব্যস্ত। আমন্ত্রণ জানাব কি না, এ ব্যাপারে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।’
আগামীকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ৮৬ পাউন্ড ওজনের কেক কেটে জন্মদিনের প্রথম প্রহর উদযাপন করা হবে। পাশাপাশি তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হবে।
পরদিন রোববার সকাল ১০টায় রাজধানীর গুলশান ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে জন্মদিনের কেক কাটার পর সেখানে দুপুরে নেতা-কর্মীদের আপ্যায়ন করা হবে। পাশাপাশি সারাদেশে চেয়ারম্যানের জন্মদিন উপলক্ষে কেককাটা, আলোচনাসভা, মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুসহ রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদেরও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
১৯৩০ সালের ২০ মার্চ কুড়িগ্রাম জেলায় এরশাদ তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এরশাদ। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান। পরবর্তী সময়ে তিনি সেনাপ্রধান হন। এরপর রাষ্ট্রপতি হয়ে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে দেশ শাসন করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে তিনি ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে তিনি স্বপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ভোটপ্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন এবং পরে ৫ (পাঁচ) বৎসরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে গণবিক্ষোভের চাপে এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনের অভাবে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কারাগার থেকে অংশগ্রহণ করেন এবং রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদেও তিনি রাজধানী ঢাকার একটি এবং রংপুরের দুটিসহ মোট তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। চলতি দশম জাতীয় সংসদেরও একজন সদস্য তিনি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করছেন।