আগৈলঝাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন তিন বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন ওসি!

Slider গ্রাম বাংলা বরিশাল সারাদেশ
2016_02_18_18_30_13_z52hHVpOPVVNlIJyjwjfO416IRgp7u_original

বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি মামলা ও গ্রেপ্তারের হুমকির অভিযোগ করেছেন ওই প্রার্থীরা। এ ব্যাপারে দুই প্রার্থী প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেছেন, তাঁকে বিতর্কিত করে বিশেষ সুবিধা পেতে চাইছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
২২ মার্চ প্রথম দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে। রত্নপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য গোলাম মোস্তফা। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহীন আলম সন্যামাত। বাকাল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি বিপুল দাস। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি লিটন তালুকদারের স্ত্রী উপজেলা মহিলা লীগের সদস্য লাবণ্য আক্তার তালুকদার। বাগধা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বাবুল ভাট্রি। এখানে বিদ্রোহী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. রফিক সরদার। তবে গৈলা ও রাজিহার ইউনিয়নে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই।
গত শুক্রবার সরেজমিনে বিদ্রোহী প্রার্থী, তাঁদের কর্মী ও এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁদের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপক্ষে কাজ করলে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন তিনি।
রত্নপুর ইউনিয়নের প্রার্থী শাহীন আলমের সমর্থক রত্নপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া (৫০) ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম মৃধা (৩২) অভিযোগ করেন, ওসি তাঁদের বাড়িতে গিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেন। অন্যথায় থানায় নিয়ে হাত-পা ভেঙে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশ্রাব আলী (৫২) অভিযোগ করেন, গত ৭ মার্চ দুপুরে ওসি মনিরুল মোল্লাপাড়া সঞ্জয়ের চায়ের দোকানে উপস্থিত হয়ে তাঁকেসহ শাহীন আলমের কর্মীদের বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার প্রার্থী শাহীন আলম ওসির বিরুদ্ধে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি ঢাকায় গিয়ে এ চিঠি দিয়ে আসেন। চিঠিতে শাহীন আলম উল্লেখ করেন, ‘আমি নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায় ওসি আমাকে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখান এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করতে চাপ প্রয়োগ করেন। মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আমার কর্মীদের হয়রানি শুরু করেন। আমার কর্মীদের নির্বাচনের পূর্বে এলাকাছাড়া করার হুমকি দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন।’
বাকাল ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী লাবণ্য আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ৮ মার্চ তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ চিঠি তিনি ডাকযোগে পাঠিয়েছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক, বরিশালের ডিআইজি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগের অনুলিপি পাঠিয়েছেন। কিন্তু এরপরও ওসির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এই অবস্থায় নির্বাচনের আগে ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে গত শুক্রবার তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
বাগধা ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রফিক সরদারও একই অভিযোগ করে প্রথম আলোকে বলেন, ওসির পক্ষ থেকে ভয়ভীতি দেখানোর কারণে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। এই অবস্থায় নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রফিক।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ওসি মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রত্নপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা চরমপন্থী সংগঠনের লোকজন নিয়ে নিরীহ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। তা ছাড়া চাঁদাবাজ, হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় আমাকে চাপে রাখতে এ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ অন্য দুই প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, একই কৌশলে তাঁকে বিতর্কিত করে বিশেষ সুবিধা পেতে চাইছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কাছে কোনো প্রার্থী কোনো অভিযোগ করেননি। আর তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও কোনো নির্দেশনা পাননি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল হালিম গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরণের কোনো অভিযোগ এখনো হাতে পাইনি। যদি কোনো প্রার্থী এমন অভিযোগ করেন এবং তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *