অর্থ পাচারের আন্তর্জাতিক চক্রান্তে জড়িত থাকার সন্দেহে দেশ ত্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে ফিলিপাইনের মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিটের রিজাল কমার্সিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) শাখার ম্যানেজার মাইয়া স্যান্তোষ-দুগুইতোকে। তাই তিনি জাপান যাওয়ার সময় নিনয় আকুইনো ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে দিলেন অভিবাসন কর্মকর্তারা। এ ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার। তাকে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়ার পর হেঁটে বেরিয়ে আসেন। এমন একটি ছবি প্রকাশ হয়েছে মিডিয়ায়। বলা হচ্ছে, ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার অর্থ পাচারের সঙ্গে তিনি জড়িত বলে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। এ অভিযোগে সিনেটে তদন্তের মুখে রয়েছেন তিনি। এমন এক মুহূর্তে তিনি ফিলিপাইন ছেড়ে জাপানের পথে পাড়ি দিচ্ছিলেন। আরোহন করেছিলেন ফিলিপাইন এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৪৩২ তে। সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী ও সন্তান। বিমান ছাড়ার আগে এ খবর যায় অভিবাসন বিভাগে। এ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা দ্রুত ওই বিমানে প্রবেশ করেন। তারা ম্যানেজার মাইয়া স্যান্তোষ-দুগুইতো, তার স্বামী ও সন্তানকে বিমান থেকে নামিয়ে নেন। তবে কেন তাদেরকে দেশ ছাড়তে বাধা দেয়া হলো তা অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা পরিষ্কার করে বলেন নি। ম্যানিলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট অথরিটির মুখপাত্র ডেভিড ডি ক্যাস্ট্রো বলেছেন, অভিবাসন ব্যুরোর নির্দেশে তাদেরকে বিমান থেকে নামিয়ে নেয়া হয়েছে। অভিবাসন ব্যুরোর মুখপাত্র নিক্কি রিয়েস বলেন, মাইয়া স্যান্তোষ-দুগুইতো আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিবাসনের ‘লুকআউট লিস্টে’ ছিলেন। একটি সূত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি যাওয়া নিয়ে ফিলিপাইনের নাম জড়িয়ে গেছে। এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মাইয়া স্যান্তোষ-দুগুইতোর দেশ ছাড়া থামানোর নির্দেশ চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিনেটর তৃতীয় সের্গেই ওসমেনা। তিনি এ ঘটনায় সিনেটের তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্য একটি সূত্র বলেছেন, মাইয়া স্যান্তোষ-দুগুইতোকে যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন সে বিষয়ে সিনেটর ওসমেনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বহুল আলোচিত ব্যাংক আরসিবিসির আইনজীবীরা। কারণ, তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে আরসিবিসির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। কিভাবে বাংলাদেশের ওই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ হয়ে ফিলিপাইনে প্রবেশ করেছে তা নিয়ে তদন্ত করছে এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) ও ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। এ ঘটনায় সিনেট যে আলাদা তদন্ত করছে সেই রিপোর্ট আগামী মঙ্গলবার প্রকাশ করার কথা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মাইয়া স্যান্তোষ-দুগুইতোর বিরুদ্ধে কোন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয় নি। দুগুইতো শুক্রবার একটি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, এএমএলসির একটি ফ্যাক্স তাকে অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা তাকে দেখিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, তিনি এই অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, অর্থ পাচারের কথা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তিনি দেশছেড়ে যাচ্ছেন না। শুক্রবার জাপান যাওয়ার চেষ্টা সম্পর্কে তিনি বলেন, ছেলের জন্মদিন। এ দিনে তাকে উপহার হিসেবে টোকিওতে ডিজনিল্যান্ড ঘুরাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন ছেলেকে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন গ্রেপ্তারি বা অন্য কোন পরোয়ানা দেখাতে পারেন নি অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা। ওদিকে তাকে আগামী সপ্তাহে শুনানিতে উপস্থিত হতে সমন পাঠিয়েছে সিনেট কমিটি। বিমান থেকে নামিয়ে তাদেরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় সে বিষয়ে দুগুইতো কিছু বলেন নি। কিন্তু বিমানবন্দরের এক সূত্র বলেছেন, ম্যানিলায় অবস্থিত অভিবাসন বিষয়ক ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়। বিমানবন্দরের ২ নম্বর টার্মিনালের তথ্য বিষয়ক ইউনিটের আইলিন সালদানা বলেছেন, দুগুইতোকে নিয়ে তাদের ওই ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৩৭ মিনিটে উড্ডয়নের কথা ছিল। কিন্তু তাকে নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার জন্য তা উড্ডয়ন করে ৪টা ৫ মিনিটে। তবে বিমানবন্দর থেকে বলা হয়েছে ফ্লাইটের এই বিলম্ব এয়ার ট্রাফিকে জট লাগার কারণে। দুগুইতোকে বিমান থেকে নামানো নিয়ে এই বিলম্ব হয় নি।