ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চরম বিদ্রোহের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে ঘোষিত প্রায় অর্ধেক ইউনিয়নেই দলীয় নেতারা বিদ্রোহ করে প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে কারো কারো সঙ্গে প্রকাশ্য কাজও করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বহিষ্কারেরও তোয়াক্কা করছেন না। তাদের দাবি, তৃণমূলের মতামতকে অগ্রাহ্য করে প্রার্থী দেয়ার কারণেই বিদ্রোহীরা
মাঠ ছাড়ছেন না। ওদিকে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের দিকে চোখ রাঙাতে শুরু করেছেন দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। মৌখিক সতর্ক করে দিলেও তারা এসবে নজর দিচ্ছেন না। প্রথম দফা নির্বাচনে সিলেট সদর উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতেই ছিল বিদ্রোহীদের ছড়াছড়ি। দ্বিতীয় দফা কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ দুটি উপজেলাতেও ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্বাচনে সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তিন উপজেলায় প্রায় ১৩টি ইউনিয়নে বিদ্রোহীরা মাঠ ছাড়েননি। কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের হুমকির মুখে তারা নির্বাচনী মাঠে জোরেশোরে চালাচ্ছেন প্রচারণা। সদর উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতেই রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এর মধ্যে খাদিমপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফসর আহমদ, টুলটিকর ইউনিয়নে জেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সভাপতি এসএম আলী হোসেন, জালালাবাদ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা মনফর আলী ও শামছুল ইসলাম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন- রুস্তমপুর ইউনিয়নে আবদুল মতিন, পূর্ব জাফলং ইউনিয়নে লুৎফুর রহমান লেবু ও আলীরগাঁও ইউনিয়নে আবুল কাশেম মো. আনোয়ার শাহাদত। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নে গেদা মিয়া, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নে ইলিয়াছুর রহমান, তেলিখাল ইউনিয়নে আবদুল হক ও কাজী আবদুল ওয়াদুদ আলফু, উত্তর রণিখাই ইউনিয়নে ফরিদ উদ্দিন এবং দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নে এম. হান্নান। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তৃণমূলের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে নৌকার প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। এবং তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ফলে বিদ্রোহীরা নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারবে না। খাদিমপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফসর আহমদ জানিয়েছেন, ‘আমি ইউনিয়নবাসী ও আওয়ামী লীগের তৃণমূলের প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া সঠিক না হওয়ায় সাধারণ ভোটার ও আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে নির্বাচনে লড়তে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তারা এখন সঙ্গেও আছেন।’ এদিকে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ খাদিমপাড়া ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রাথী অ্যাডভোকেট আফসার আহমেদকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেছেন, শুক্রবারের মধ্যে দলী শৃঙ্খলা মেনে না নিলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। তিনি খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নৌকা প্রতীক চেয়ারম্যান পদপ্রাথী নজরুল ইসলাম বেলালকে ভোট দেয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানান। ওদিকে, সিলেট সদর উপজেলার টুলটিকর ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামা চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবদুল মোছাব্বির আওয়ামী লীগের লোক নয় বলে অভিযোগ তুলেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সমপ্রতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক সভায় নেতাকর্মীরা এমন অভিযোগ তুলে বলেন, আবদুল মোছাব্বিরের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার দায়ভার নিবেন না তারা। ওয়েছ খতবে আওয়ামী লীগের সমর্থকসহ কাউকে তারা বারনও করবে না আবদুল মোছব্বিরের প্রচার প্রচারণায় অংশ নিতে। এমনকি তাকে ভোট দিতেও। তারা বলেন, ভোট দেয়া ও প্রচারকাজে অংশ নেয়া প্রত্যেকের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপরই তা নির্ভর করে। সভায় আলোচনা হয়, নৌকা প্রতীক পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবদুল মোছাব্বির আওয়ামী লীগের কোনো কার্যক্রমে অংশ নেননি বা আওয়ামী লীগের সদস্য পদও তার নেই। নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ তরমুজ আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবদুল মোছাব্বির আওয়ামী লীগের লোক নয়। এরপরও ৮ই মার্চের সভার পর আমরা তার সঙ্গে বসেছি। তাকে আওয়ামী লীগের সদস্য ফরম পূরণ করতে বললে তিনি তা করেননি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে চাইলে তিনি বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে আসতে চান না। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মো. আলী হোসেন নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারাও প্রচারণায়ও রয়েছেন।