ঢাকা: নেদারল্যান্ডসকে ৮ রানে হারিয়ে টি২০ বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে বাংলাদেশ। বুধবার ধর্মশালায় প্রাথমিক রাউন্ডের এ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে আগে ব্যাট করতে নেমে সাত উইকেটে ১৫৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে সাত উইকেটে ১৪৫ রান করে নেদারল্যান্ডস। ফলে ৮ রানের রোমাঞ্চকর জয় পায় মাশরাফি বাহিনী। আগামী ১১ মার্চ গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য করতে হবে ১৫৪ রান। নেদারল্যান্ডসের জন্য ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে নেদারল্যান্ডস মাঝে মধ্যেই ঝলক দেখানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ অবধি আর রক্ষা হয়নি। বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১৪৫ রানে থামে ডাচ বাহিনীর ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ৮৩ রানে অপরাজিত থাকার সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার অনুমিতভাবেই জিতেছেন হার্ড হিটার ওপেনার তামিম ইকবাল।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে দেখেশুনে আগাতে থাকে নেদারল্যান্ডসের দুই ওপেনার। তবে শুরুর দিকে দুটি এলবিডব্লিউর আবেদন করলেও আল আমিন ও তাসকিনের ডাকে সাড়া দেননি ভারতীয় আম্পায়ার এস রবি। তবে বাংলাদেশ দলের হয়ে ঠিকই ব্রেক থ্রু এনে দেন আল আমিন। এশিয়া কাপে পাকিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধেও তিনি প্রথম উইকেট নিয়েছিলেন। বুধবার নেদারল্যান্ডসের ওপেনার ওয়েজলি বারেসিকে বিদায় করেন আল আমিন। ১১ বলে ৯ রান করা বারেসি আল আমিনের বলে ক্যাচ তুলে দেন সাব্বিরের হাতে।
তবে কুপারকে সঙ্গে করে ওপেনার স্টিফেন মাইবার্গ এগুচ্ছিলেন সাবলিল ঢঙে। শেষ অবধি দ্বিতীয় এই উইকেট জুটি বিচ্ছিন্ন করেন নাসির হোসেন। ২৯ বলে ২৯ রান করে ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা ওপেনার মাইবার্গকে বোল্ড করেন তিনি। তবে অধিনায়ক বোরেনের সঙ্গে শক্ত জুটিরই আভাস দিচ্ছিলেন বেন কুপার। কিন্তু শেষ অবধি তাতে বাধ সাধলেন সাকিব। ১৫ বলে ২০ রান করা কুপারকে সরাসরি বোল্ড করেন সাকিব। নেদারল্যান্ডসের দলীয় রান তখন ১১.২ ওভারে ৭৭ রান।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে পিটার বোরেন ও টম কুমার ভালোই আগাচ্ছিলেন। শঙ্কা বাড়ছিল বাংলাদেশের জয় নিয়ে। ১৫.৪ ওভারে সাকিবের বলে শূন্যে বল তুলে দেন বোরেন। তা লুফে নিতে পারেননি নাসির। তবে এই ওভারের শেষ বলেই বোরেনকে তালবন্দী করে আগের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন নাসির।
শেষের দিকে আল আমিনের করা ১৯তম ওভারে ১৬ রান তুলে ম্যাচে নতুন মোড় সৃষ্টি করে নেদারল্যান্ডস। কিন্তু শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৭ রান। তবে তাসকিনের করা ওভারে নেদারল্যান্ডস করতে পারে ৯ রান। ৮ রানের জয় আসে টাইগার্স শিবিরে। বাংলাদেশের হয়ে সাকিব ও আল আমিন দুটি, মাশরাফি ও নাসির একটি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে টসে হেরে অপরিচিত কন্ডিশনে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ধীরগতিতে আগায় বাংলাদেশ। কিন্তু দলীয় ১৮ রানেই ছন্দপতন। পল ভ্যান মেকারেনের বলে ওয়েসলে ব্যারেসির হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার। ইনিংসের শুরুতে লাইফ পেয়েছিলেন সৌম্য। তার সুবিধাটা আদায় করতে পারেনিন। সাজঘরে ফেরেন ১৩ বলে দুই চারে ১৫ রান করে।
এরপর সাব্বিরকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন ওপেনার তামিম ইকবাল। ভালোই চলছিল। তবে ৪২ রানের এই জুটি ভাঙেন ভ্যান ডার মারউই। ১৫ বলে ১৫ রান করা সাব্বিরকে এলবির ফাঁদে ফেলেন তিনি। ৮.৩ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন দুই উইকেটে ৬০ রান।
তামিমের সঙ্গে এরপর ব্যাট করতে নামেন ফর্মে ফিরতে মরিয়া সাকিব আল হাসান। তবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নিজের নামের সুবিচার করতে পারেননি তারকা এই অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে আবারও ব্যর্থ তিনি। দলীয় ৭৮ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন সাকিব। সাত বলে মাত্র ৫ রান করে ডাচ অধিনায়ক বোরেনের বলে ক্যাচ তুলে দেন শর্ট থার্ডম্যানে মাইবার্গের হাতে।
তবে ব্যাট হাতে শেষ অবধি অবিচল ছিলেন ওপেনার তামিম ইকবাল। প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস বলেই তার ব্যাটটা বেশ চওড়া। ৩৬ বলে পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি। এর মধ্যে তিনটিই নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে। আগের দুই টি২০তে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে তামিমের রান ছিল যথাক্রমে ৬৯* ও ৫০।
এশিয়া কাপে নিচের দিকে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন মাহমুদউল্লাহ। ফলে সবার দাবি মেটানোর জন্য পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন তিনি। কিন্তু ধর্মশালায় ঝড় তুলতে পারেননি রিয়াদ। ৯ বলে ১০ রান করে ফেরেন তিনি ফন সার গাগটেনের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে। এর এক বল পরেই ব্যাট হাতে ধুকতে থাকা মুশফিকও এদিন ব্যর্থ। দুই বল খেলে রানের খাতায়ই খুলতে পারেননি। তিনিও রিয়াদের মতোই ফন সার গাগটেনের বলে বোল্ড।
শেষের দিকে নাসির সাত বলে তিন রান করে ফেরেন। ছক্কা হাঁকিয়ে ঝড়ের আভাস দিলেও পারেননি ক্যাপ্টেন মাশরাফি। পাচ বলে সাত করে তিনি গাগটেনের শিকার। চার বলে ৮ রান করে অপরাজিত থাকেন আরাফাত সানি। আর ৮৩ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। শেষ ওভারের কয়েকটি বল মোকাবেলার সুযোগ পেলে টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটাই ভেঙ্গে দিতে পারতেন তামিম। কিন্তু পারেননি তার রেকর্ড ৮৮ রান ছুতে। তবে পেয়েছেন চার বছর পর টি২০ ক্রিকেটে ফিফটির দেখা। যাতে বাড়তি স্বস্তি পেতেই পারেন তিনি।