স্বপ্নপূরণের ফাইনাল আজ

Slider খেলা টপ নিউজ

 

 

5b8819eac7432a087fab6aaa88ddfabb-24

 

 

 

 

দুই দিন ধরে মিরপুরে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ ‘ফাইনাল’ নয়, ‘টিকিট’।
বাংলাদেশের মাটিতে কোনো একটা ফাইনাল খেলা হবে অথচ টিকিট-সংকট থাকবে না, সে তো প্রায় অসম্ভব। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ এশিয়া কাপের ফাইনাল এবং যথারীতি দেশজুড়ে তীব্র টিকিট-সংকট। ‘দেশজুড়ে’ না বলে বলা উচিত ‘মিরপুরজুড়ে’। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাত্র ২৪-২৫ হাজার আসন তো স্টেডিয়ামের আশপাশের এলাকার মানুষকেই বসার জায়গা দিতে পারে না! দেশের অন্যান্য শহর দূরের কথা, ঢাকা শহরের মানুষের জন্যই ‘টিকিট’ এক সোনার হরিণের নাম। এশিয়া কাপের বাংলাদেশ-ভারত স্বপ্নের ফাইনালকে ঘিরে পুরোনো প্রশ্নটাই তাই সামনে নিয়ে এল। ক্রিকেট-অন্তঃপ্রাণ ১৬ কোটি মানুষের দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারির ধারণক্ষমতা মাত্র ২৫ হাজার হবে কেন?
ভবিষ্যতে কোনো একদিন হয়তো এই ধারণক্ষমতা বাড়বে। তবে তত দিনে এই দেশের লোকসংখ্যা কত কোটিতে গিয়ে ঠেকবে সেটাই প্রশ্ন। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় ম্যাচ দেখার ‘অধিকার’ শুধু প্রভাবশালীদের। আমজনতা দর্শক টিকিট না পাওয়ার ক্ষোভে মৃদু ভাঙচুর করে কাঁদানে গ্যাস খেয়ে বাড়ি ফিরে যান। তারপর টেলিভিশনেই খেলা দেখে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ চিৎকার করতে থাকেন। তাতে সরাসরি খেলা দেখার তৃপ্তি না পেলেও আবেগের ঘোড়া সেখানেও বল্গাহারা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তি এই দর্শক-সমর্থকই। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দলের ‘বাঘ হয়ে ওঠা’র টনিকও। তবে ভারতীয় দলের পরিচালক রবি শাস্ত্রী ভারতের জয়ের পথে এটিকে বড় বাধা বলে মানেন না। মিরপুরে কাল ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, ‘আমরা এসবে অভ্যস্ত। সব দর্শক বাংলাদেশকে সমর্থন করলেই বা কী আসে-যায়!’
বাংলাদেশের সব প্রতিপক্ষেরই সৌভাগ্য যে, এ দেশের কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যুর ধারণক্ষমতাই ২৫ হাজারের বেশি নয়। গ্যালারির ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ চিৎকারটা তাই তাদের জন্য সহনীয় পর্যায়েই থাকে। তবে বাংলাদেশ দল বঞ্চিত হচ্ছে মাঠে দাঁড়িয়ে আরও বেশি লাল-সবুজ পতাকা দেখা থেকে। মাঠে এসে খেলা দেখার আশা সবার পূরণ হবে না, মাশরাফিরা পাবেন না ৫০ হাজারের বেশি হাতের তালি—এই সত্য মেনে নিয়েই আজ আরেকটি ইতিহাসের সামনে বাংলাদেশ দল। ২০১২-এর ২ রানের আক্ষেপ ঘুচিয়ে তারা কি পারবে এশিয়া কাপের ট্রফি তুলে ধরতে? আজ কেমন হবে বাংলাদেশের রাতটা? আলোর ঝরনাধারায় উজ্জ্বল, নাকি আরও একবার হতাশার কালো চাদরে ঢাকা পড়বে চরাচর?
বাংলাদেশ দল আশাবাদী, চার বছর আগের হতাশার ক্ষত শুকিয়ে যাবে জয়ের উত্তাপে। শক্তির তারতম্যে মহেন্দ্র সিং ধোনির দলের এগিয়ে থাকা অস্বীকার করার উপায় নেই।
টানা তিন জয়ের আগে এবারের এশিয়া কাপ বাংলাদেশ শুরু করেছে তাদের কাছে হেরেই। তবে স্বপ্নযাত্রা প্রতিবারই আক্ষেপের সমুদ্রে মিশবে, এমনটা বিশ্বাস করেন না অধিনায়ক। আজকের ফাইনালকে তিনি একটা আলাদা ম্যাচ হিসেবেই দেখছেন, ‘ফাইনাল বলে এই ম্যাচের মেজাজ আলাদা হবেই। তবে আমাদের কাছে এটা স্রেফ আরেকটা ম্যাচই। গত তিন ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও নিজেদের সেরাটা খেলতে চাই।’
খেলোয়াড়দের মনে এ রকম আশার বসতিকে বলে আত্মবিশ্বাস। কিন্তু যখন প্রত্যাশার পাল ওড়ায় ১৬ কোটি মানুষ, সেই আত্মবিশ্বাস পড়ে যায় প্রবল চাপে। মাশরাফি শুরু থেকেই চেষ্টা করছেন প্রত্যাশার পারদকে নিচে নামিয়ে রাখতে। কিন্তু ফাইনালের উত্তাপের মধ্যে দাঁড়িয়ে কি আর সেটা সম্ভব? অধিনায়ক তাই এখন একটাই করণীয় দেখছেন, আর সব বাদ দিয়ে শুধু ম্যাচ নিয়ে ভেবে উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।
এখন পর্যন্ত সেটা তাঁরা করেও দেখিয়েছেন এবং বিস্ময়করভাবে তাতে দলের পেসারদের অনেক বড় অবদান। মিরপুরের সবুজাভ উইকেট দেখিয়ে কাল কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলছিলেন, ‘যেসব উইকেটে বল দ্রুত ব্যাটে আসে আমার সেসব উইকেটই পছন্দ। তবে ঘাসের উইকেটে শিশির জমলে বল অনেক সময় এদিক-সেদিক হয়।’ শ্রীলঙ্কান কোচের বিশ্বাস, সবুজ উইকেটে খেলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন তাঁর ব্যাটসম্যানরা। কাজেই উইকেটের কালকের ঘাসটা আজ থেকে গেলেও সমস্যা নেই। বোলিংয়ের সময় বরং সেটাই হতে পারে আশীর্বাদ।
প্রথম ম্যাচের মতো ভারতের বিপক্ষে আজও চার পেসার নিয়েই খেলার সম্ভাবনা বাংলাদেশ দলের। বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানির জায়গায় টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ পেতে পারেন তরুণ পেসার আবু হায়দার। দলে পরিবর্তনের সম্ভাবনা আর একটাই—মোহাম্মদ মিঠুনের জায়গায় সম্ভবত আসছেন নাসির হোসেন। তবে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা দূর না হলে ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে হিসাব-নিকাশ। গত পরশু ব্যাটিং অনুশীলনের সময় বাঁ ঊরুর ওপরের দিকে বলের আঘাত লেগেছে। কালও ব্যথাটা পুরোপুরি যায়নি বলে অনুশীলনে নেমেও উঠে গেছেন সাকিব। ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম অবশ্য কাল রাতেও আশা দিলেন, ‘ব্যথার জায়গায় বরফ দেওয়া হচ্ছে, ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সাকিবের খেলা নিয়ে কোনো সংশয় দেখছি না।’
এই একটি অনিশ্চয়তা ছাড়া ফাইনালের আগের বাংলাদেশ দলে আত্মবিশ্বাসের অভাব নেই। তবে সেই আত্মবিশ্বাস দিয়ে দেশকে আনন্দের বন্যায় ভাসানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন না মাশরাফি। অধিনায়ক মনে করেন, সাফল্যের পতাকা ওড়াতে পারলে ভালো, না ওড়াতে পারলেও এগিয়ে যাওয়ার বার্তাটা থাকবে, ‘এমন নয় যে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখানেই থেমে যাচ্ছে। এই টুর্নামেন্ট খুব ভালো একটা বার্তা দিয়েছে যে টি-টোয়েন্টিতেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। জিতলে অসম্ভব ভালো লাগবে। না জিতলেও আমরা এগিয়ে যাব।’
সেই যাত্রায় মাশরাফিদের পেছনে আছে পুরো বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *