আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি সমাজের সব স্থানে প্রবেশ করেছে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে হত্যাকারীদের প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। এখন আমরা বিচার চাইতেও ভুলে গিয়েছি। ত্বকী হত্যার মতো একটা নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের বিচার হবে না সেরকম দেশে আমরা বাস করছি এটা ভেবে মাথা নিচু করতে হয়। আজ বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’ আয়োজিত ‘তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচারে রাষ্ট্রের অনীহা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। সুলতানা কামাল বলেন, একটা স্বাধীন দেশে দাঁড়িয়ে বিচারের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। অথচ আমাদের সংবিধানে আছে প্রত্যেকটা নাগরিক আইনের কাছে সমান। কিন্তু আইন ব্যক্তি বিশেষে সঠিকভাবে কাজ করছে না। কিছু কিছু জায়গায় বিচার স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছে। সমাজের মূল্যবোধ এবং ন্যায় বিচার আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তিনি বলেন, গণতন্ত্রবিহীন উন্নয়ন কখনও মানুষকে রক্ষা করতে পারে না। মানবাধিকার রক্ষা করতে পারে না। সুলতানা কামাল বলেন, ত্বকী হত্যায় ওসমান পরিবার জড়িত তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই হত্যার বিচারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত দুঃখ কিছুটা হলেও কমবে। আর এই হত্যার বিচারের মাধ্যমে আমাদের প্রমাণ করতে হবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, সব আলামত থাকা সত্ত্বেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না। প্রতিবছর আমরা ভাবি এইবছর পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় সমাজ সেভাবেই আছে। বর্তমানে দেশে একটি ফর্মূলা চলছে, হত্যাকারী যদি প্রভাবশালী হয়, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকে তাহলে আর বিচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তিনি বলেন, দেশে যদি প্রকৃতপক্ষে উন্নয়ন হতো তাহলে সুশাসন থাকতো। সরকার সরাসরি খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। সেজন্য আইন আদালত নিজের গতিতে চলতে পারছে না। বিচার চাওয়াই বর্তমানে অস্তিত্বের একটা প্রশ্ন। তবুও এইসব হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য অবিরাম, অব্যাহতভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাষ্টি মফিদুল হক বলেন, ত্বকী হত্যা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আর হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিও কোন বিচ্ছন্ন ঘটনা নয়। এটা কোন রাজনৈতিক দাবি নয়, আমাদের সাধারণ জনগণের দাবি। নিহত ত্বকীর পিতা রাফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ফিরোজ আহমেদ, ভাষা সৈনিক কামাল লোহানী প্রমুখ।