উপজেলা চেয়ারম্যানকে বরখাস্তের সুপারিশ ফুলগাজীর সব ইউপির নির্বাচন বাতিল

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা রাজনীতি

012016Pic-13

 

একাধিক জায়গায় মনোনয়নপত্র গ্রহণের কৌশলও কাজে আসছে না। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সন্ত্রাসীদের বাধা ডিঙিয়ে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিশ্চিত করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। মারধরের শিকার হওয়া ও মনোনয়নপত্র ছিনতাইয়ের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছেন না প্রার্থীরা।
এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার কমিশন ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সব কটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিমকে বরখাস্তের সুপারিশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেওয়ায় কমিশন একই জেলার পরশুরাম উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় এক দিন বাড়িয়ে দিয়েছে।
গতকাল বিকেলে কমিশন সচিবালয় থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠি ফেনীর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। চেয়ারম্যান আবদুল আলিমকে বরখাস্তের সুপারিশ করা চিঠি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে সন্ধ্যার পর।
২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল সন্ত্রাসীরা ফুলগাজী উপজেলার চেয়ারম্যান একরামুল হককে হত্যা করে। এরপর উপনির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আবদুল আলিম।
গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে ফেনী ও দাগনভূঞা পৌরসভায় মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ফেনী, বারোভুঁইয়া ও পরশুরাম পৌরসভায় ৪৮টি কাউন্সিলর পদের মধ্যে ৪৩টিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। অভিযোগ আছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের দাপটে বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।
গত সোমবার বিএনপি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করে বলেছে, ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা ১১৪টির মতো ইউপিতে বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দিয়েছেন। অনেক জায়গায় তাঁদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র ছিনতাই করে নিয়ে গেছেন। এ অভিযোগের পর মঙ্গলবার কমিশন থেকে জানানো হয়, রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে।
কমিশন সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার ফুলগাজী উপজেলার চেয়ারম্যানের লোকজন উপজেলা নির্বাচন অফিসে হানা দিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ ফরিদকে লাঞ্ছিত করে ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারীকে মারধর করে। এ ঘটনায় কমিশন সচিবালয় শেখ ফরিদ ও তাঁর অফিস সহকারীকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। ছুটি পাওয়ার পর গতকালই তাঁরা ফুলগাজী এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার নির্বাচন অফিস সন্ত্রাসীরা ঘিরে রাখে। এ অবস্থায় বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান। তার আগে থেকেই ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিমের লোকজন জেলা প্রশাসকের দপ্তরের বাইরে অবস্থান নেন। বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কয়েকজন জেলা প্রশাসকের দপ্তরে গেলে সন্ত্রাসীরা তাঁদের প্রবেশে বাধা দেয়। তারা ফুলগাজীর জিএম হাট ও আনন্দপুর ইউপির দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী খোরশেদ আলম ও মো. ফখরুদ্দিনকে মারধর করে এবং তাদের মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেয়।
এ ছাড়া একই দিন সন্ত্রাসীরা ফুলগাজী উপজেলা সদরে বিএনপি অফিসে হামলা করে ভাঙচুর চালায়। এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক আমিন আল আহসানের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আরও জানা যায়, পরশুরামের বক্স মাহমুদ ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপির ইব্রাহীম খলিল, চিথলিয়া ইউপির প্রার্থী আবদুর রব মজুমদার ও মির্জানগর ইউপির চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের বাইরে সন্ত্রাসীরা তাদের মারধর করে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেয়।
এসব ঘটনায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ ফরিদ কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন। গতকাল কমিশন অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর দুপুরে ফুলগাজীর সব কটি ইউপির (আমজাদ হাট, দরবারপুর, ফুলগাজী, জিএম হাট, মুন্সিরহাট ও আনন্দপুর) নির্বাচনের তফসিল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে চিথিলা, বক্স মাহমুদ ও মির্জানগর ইউপির মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় এক দিন বাড়ানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবারও সেখানে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আগে তো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে হবে। তারপর সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির প্রশ্ন আসে। কিন্তু প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রই জমা দিতে দিচ্ছে না। নির্বাচন কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এসব তো বরদাশত করা যাবে না। সে জন্যই কমিশন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। এখন থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও বাধা: প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল দুপুরে যশোর সদর উপজেলার চূড়ামনকাঠি ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী আবদুস সাত্তারকে একটি ঘরে তালা মেরে অবরুদ্ধ করে রাখে সন্ত্রাসীরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তালা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করে। সন্ত্রাসীরা সাত্তারকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগের লোকজন সদর উপজেলার ১৫টি ইউপিতে অন্তত ২০টি ওয়ার্ডের প্রার্থীদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
তিন ইউপি নির্বাচন স্থগিত: সীমানা জটিলতার কারণে নির্বাচন কমিশন গতকাল ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার আলফাডাঙ্গা, বুড়াইচ ও গোপালপুর ইউপির নির্বাচন স্থগিত করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *