এ ছাড়া আর কোনো ব্যাংকে এ ধরনের জালিয়াতি হয়েছে কি-না তা জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সব ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে।
সৌদি আরবের ব্যাংক আল-রাজির গ্রাহকদের কার্ড জালিয়াতি করে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চারটি বুথ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা তুলে নেয় প্রতারকচক্র। প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী, বসুন্ধরা, উত্তরা ও কাকরাইলে স্থাপিত এটিএম বুথ ব্যবহার করে ১৪ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি সময়ে টাকা তোলা হয়। আল-রাজি ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের ক্লোন করা ১৫০টি কার্ড ব্যবহার করে মোট ১৯৮টি লেনদেনের মাধ্যমে টাকা তুলেছেন তিন বিদেশি। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল ব্যাংক থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ ও সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সব কার্ডই ক্লোন হয়েছে দেশের বাইরে। তবে সংশ্লিষ্ট দেশে ক্লোন কার্ড দিয়ে টাকা তোলা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বাংলাদেশের চ্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে প্রত্যেকের চেহারা স্পষ্ট থাকায় শিগগিরই এদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। এর আগে চারটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনে বিদেশি নাগরিকের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। একজন বিদেশি নাগরিককে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, চারটি বুথে ঘুরেফিরে টাকা তুলেছেন তিন বিদেশি। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটে গত শনিবার সকালে। ওই দিন প্রিমিয়ার ব্যাংকের একটি বুথে সকাল ৭টা ৪৩ থেকে ৯টা ৪ মিনিট পর্যন্ত টানা টাকা তোলেন দুই বিদেশি। দু’জনের কাঁধেই ছিল ব্যাগ। যিনি টাকা তুলছেন তার হাতে একটি কাগজে লেখা বেশ কিছু নম্বর। ধারণা করা হচ্ছে, কাগজে লেখা ওই নম্বরগুলো ক্লোন করা কার্ডের পিন নম্বর। টাকা তুলে অন্যজনের হাতে দেওয়ার পর তিনি ব্যাগে ঢোকাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর একজন টাকা নিয়ে বের হয়ে যান। অন্যজন ব্যাগে থাকা কার্ড বের করে আরও কিছুক্ষণ টাকা তোলার এক পর্যায়ে সিকিউরিটি গার্ড ভেতরে উঁকি মারতেই মাথা চুলকাতে থাকেন। এরপর সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে কিছুক্ষণ বাগ্বিতণ্ডার পর ৯টা ৪ মিনিটে বুথ থেকে বেরিয়ে যান শেষের জন।
ভিডিও ফুটেজের অন্য একটি অংশে দেখা গেছে, টি-শার্ট গায়ে এক বিদেশি গত রোববার সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে এটিএম বুথে প্রবেশ করছেন। তার কাঁধেও ঝোলানো ছিল ব্যাগ। হাতে থাকা তালিকা দেখে একইভাবে তিনি এটিএম বুথ থেকে দু’বার টাকা তোলেন। সিকিউরিটি গার্ড উঁকি দিতেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন ১০টা ৪৮ মিনিটে। এর পর একজন নিয়মিত গ্রাহক টাকা তুলে বের হলে আবার ১০টা ৪৮ থেকে ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ওই ব্যক্তি টাকা তোলেন। দ্বিতীয় দফায় টাকা তুলতে ব্যর্থ হন তিনি। বিষয়টি ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট নয়। তবে দ্বিতীয় দফায় একটি কার্ড বুথে আটকে যায় বলে মনে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গতকাল প্রিমিয়ার ব্যাংকে এ বিষয়ে প্রাথমিক পরিদর্শনে যান। তারা সংশ্লিষ্ট বুথগুলোতেও যান। জানা যায়, চারটি এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতি করে এখন পর্যন্ত ১৫০টি বিদেশি কার্ডের বিপরীতে ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা তুলে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অন্য কোনো ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করে বিদেশি ব্যাংকের ইস্যু করা কার্ডের বিপরীতে জালিয়াতি হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে ব্যাংকগুলোকে গতকাল চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা সমকালকে বলেন, সতর্কতামূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়ার পরও প্রিমিয়ার ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে আন্তর্জাতিক কার্ড ব্যবহার করে কীভাবে টাকা উত্তোলন হলো তা জানার চেষ্টা চলছে। এখানে ব্যাংকের কোনো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া আর কোনো ব্যাংকে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি-না সে বিষয়ে ব্যাংকেগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের এমডি খন্দকার ফজলে রশিদ বলেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও অত্যন্ত কৌশলে এ জালিয়াতি ঘটেছে। কারও নাম উল্লেখ না করে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বনানী থাকায় মামলা করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রিমিয়ার ব্যাংক জালিয়াতির বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে। বিষয়টি জানানোর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করছে।
এর আগে গত ৬ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি সময়ের মধ্যে চার ব্যাংকের ৪০ জন গ্রাহকের ২০ লাখ ৫৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। ব্যাংকগুলোর ছয়টি এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে কার্ডের তথ্য চুরির পর ক্লোন কার্ডের মাধ্যমে জালিয়াতি করে দুষ্কৃতকারীরা। এ ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রত্যেক বুথে অ্যান্টি স্কিমিং এবং পিনশিল্ড ডিভাইস স্থাপন, সিসিটিভি নিয়মিত পর্যবেক্ষণসহ নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনায় ইউক্রেনের নাগরিক পিওটর এবং সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা এটিএম বুথের পাশাপাশি পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিনেও জালিয়াতির নানান তথ্য দিয়েছ