ঢাকা : এবার দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের কর আদায়ে মাঠে নামছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিদেশিদের করের আওতায় আনা, কর খেলাপি বিদেশি ও তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়াই হবে লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি, টেকসই কর্মপরিকল্পনার উদ্যোগসহ সমন্বিত টাস্কফোর্স গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিভিন্ন শাখার সদস্য, এফবিসিসিআই প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআরের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে প্রকৌশল, চিকিৎসা, গার্মেন্টস, মার্চেন্ডাইজিং, শিল্প-কারখানা ইত্যাদি খাতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনে পরামর্শকসহ দক্ষ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন বিদেশি নাগরিকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে অনেক বিদেশি কাজ করছেন। অনেকে স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করে বিপুল অংকের পারিতোষিক নিয়ে যাচ্ছেন আয়কর না দিয়েই।
এসব কারণে, বৈধ, অবৈধ বিদেশি এবং তাদের নিয়োগকর্তাদের আয়কর কার্যক্রম মনিটরিং অত্যন্ত জরুরি বলে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। একই আয়কর আইন অনুযায়ী বিদেশিদের ওপর প্রযোজ্য কর সংগ্রহ কার্যক্রম মনিটরিং এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তাদের ও তাদের নিয়োগকর্তার ওপর জরিমানা ও ফৌজদারি কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমন্বিত টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকের তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যথা : বিনিয়োগ বোর্ড, বেপজা, এনজিও ব্যুরো, এনএসআই, এসবি, পাসপোর্ট ও বহির্গমন বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি ইত্যাদি থেকে তাদের তথ্য সংগ্রহ, সমন্বয় এবং সহযোগিতার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে এনবিআর একটি সমন্বিত টাস্কফোর্স গঠন করবে।
এছাড়াও সভায় সর্বসম্মতভাবে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিদেশি নাগরিকদের কর সংক্রান্ত একটি ডাটাব্যাংক তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য শেয়ার করা; যেসব প্রতিষ্ঠানে তারা কাজ করছে সেসবের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হবে; কর খেলাপি বিদেশি নাগরিক এবং তাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের আয়কর ও জরিমানা আরোপে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) সহযোগিতায় তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করা হবে; বিদেশি নাগরিকদের দেশ ত্যাগ করার সময় বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ১০৭ ধারায় কর পরিশোধ সনদপত্র প্রদর্শন ও দাখিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যাদি প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে দেশে অবৈধভাবে কোনো বিদেশি নাগরিকের কাজ করার সুযোগ থাকবে না। পাশাপাশি যারা বৈধভাবে কাজ করছেন, তারা প্রচলিত আয়কর আইন অনুযায়ী কর পরিশোধ করে স্বচ্ছন্দে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
এছাড়া, বিদেশে অর্থ পাঠানো সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন বিষয়ক তথ্য কর বিভাগে প্রদান করা এবং প্রকৃত অর্থ পরিশোধের তথ্য উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি