ঢাকা: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিধি অনুসারে প্রতিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া ইসি। তবে ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে এখনও কোনো নির্দেশনা বা কোনো পরিপত্র জারি করা হয়নি।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য নির্বাচনের মতো গত পৌর নির্বাচনে প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত, কালো টাকা ও পেশীশক্তির প্রভাব, নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন, অনুদান, বরাদ্দ, অর্থ ছাড় না দেয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিকল্পণা মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। এবারও ইউপি নির্বাচনে এ রকম নির্দেশনা যাবে। একটি পরিপত্রও জারি করা হবে। তবে কবে পাঠানো হবে এটি চূড়ান্ত হয়নি।
সাড়ে ৪ হাজার ইউপি নির্বাচনে প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা করা হয় ১১ ফেব্রুয়ারি। ভোটগ্রহণ ২২ মার্চ। এরই মধ্যে ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখনও নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে টাকা ও পেশীশক্তির প্রভাব, নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন, অনুদান, বরাদ্দ, অর্থ ছাড় না দেয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক এক ইসি কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যেক নির্বাচনের আগে আমরা নির্বাচনকে প্রভাব মুক্ত রাখতে নির্বাচনী এলাকায় কোনো ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প যাতে অনুমোদন না দেয়া এ জন্য নির্দেশনা দিয়ে থাকি। তবে এ নির্দেশনা মানা হয় না। তবে এবারও চিঠি যাবে কিন্তু নির্দেশনা মানা হবে না। এ কারণে ইসিতেও এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে না বিষয়টি।
সোমবার এ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানি না। বাইরে ছিলাম তো বলতে পারি না।’
এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক। সেখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবে। এর আগে পৌর নির্বাচন উপলক্ষে একনেক বৈঠকের আগের দিন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও নির্বাচনী এলাকার প্রকল্প অনুমোদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছিল ইসি। তবে ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যা পযন্ত কোনো নির্দেশনা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি ইসি।
তবে ইসির নির্দেশনা পাওয়ার পরও পৌর নির্বাচনের সময় একনেক বৈঠকে নির্বাচনী এলাকা সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।
ওই পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নির্বাচনী এলাকার প্রকল্প অনুমোদন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, নির্বাচনের জন্য তো আর উন্নয়ন বন্ধ থাকবে না। একদিকে নির্বাচনেও চলবে অন্যদিকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও চলবে।
নির্বাচনী বিধিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনপূর্ব সময়ে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন কিংবা ফলক উন্মোচন করা যাবে না। সরকারি সুবিধাভোগী ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা’ এসব প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানকে অনুদান, বরাদ্দ বা অর্থ ছাড় করতে পারবেন না।
বিধি লঙ্ঘন হলে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এই অপরাধের জন্য ৬ মাস জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো প্রার্থী পক্ষে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠিান এই বিধান লঙ্ঘন করলে অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
নির্দেশনা না দেয়ার বিষয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের কর্মকাণ্ড দায়িত্ব অবহেলার উদাহরণ। ইউপি নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে হলে নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, অনুদান বন্ধ রাখতেই হবে। তা না হলে নির্বাচনে সরকারি দলের প্রভাব বিস্তার হবে। তারা সুবিধা পাবে বেশি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হবে।
উল্লেখ্য, এবার সারাদেশে সাড়ে চার হাজার ইউপিতে ছয় ধাপে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।১ম ধাপে ৭৩৮ ইউপিতে ভোট হবে ২২ মার্চ। দ্বিতীয় ধাপের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৬৮৪ ইউপিতে ২ মার্চ পর্যরন্ত মনোনয়ন জমার শেষ দিন, ভোট ৩১ মার্চ। এর পরে যথাক্রমে চার ধাপে ২৩ এপ্রিল ৭১১টি, ৭ মে ৭২৮টি, ২৮ মে ৭১৪টি এবং ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।