‘ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে- প্রধানমন্ত্রী

Slider জাতীয় টপ নিউজ বাংলার মুখোমুখি বিনোদন ও মিডিয়া

220750Prime-Minister

 

ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা  বলেছেন, এদের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। কোন রকমে গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করে অসাংবিধানিক সরকার আসলে তাদের কপাল খুলবে, সেই ষড়যন্ত্রেই তারা লিপ্ত। কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্রে কোন কাজ হবে না। এদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে।

আজ সোমবার রাতে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা ও সমাপনী ভাষণে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই আলোচনায় তিনি আরো বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। সেই ভুলের খেসারত দেশের জনগণ কেন দেবে। রাজনৈতিক ভুলের খেসারত তাদেরই দিতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের খুন-খারাবি, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে দেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ দেশের মানুষ সন্ত্রাস-খুন, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং পছন্দ করে না, করবেও না।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটো পত্রিকায় ২০টি বছর ধরেই আমার বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে এ দুটি পত্রিকা আমি পড়ি না। ভাল কিছু লিখলেও শেষে দিকে আমাকে খোঁচা দেবে। এ খোঁচা খেয়ে আমি আত্মবিশ্বাস হারাব। তবে পড়বো কেন? তিনি বলেন, আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে তাঁর পত্রিকা যতকিছু লিখেছে সেগুলো নাকি ডিজিএফআই সাপ্লাই দিয়েছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে লেখা থাকে নির্ভিক সাংবাদিকতা। আলোর কথা বলে অন্ধকারের কাজ করে। এই লেখাগুলো ছাপালো কিন্তু সূত্র লেখা হলো না কেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ান ইলেভেনে স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে প্রথমেই আমার ওপর আঘাত আসে। আমি তো সরকারে ছিলাম না, বিরোধী দলে ছিলাম। তবে কেন প্রথমে আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো। আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে ওই দুটি পত্রিকা একের পর এক মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে গেছে। ডিজিএফআইয়ের বিগ্রেডিয়ার বারী ও আমিনের হাত থেকে ওই সময় কেউই রেহাই পায়নি।
ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ছাত্রদের ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের সঙ্গে কী সখ্যতা ছিল তা কী প্রথম আলোর মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনামরা দিতে পারবেন? তিনি বলেন, এই দুটো পত্রিকা হয় ডিজিএফআইয়ের এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে নতুবা মাইনাস টু ফর্মুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না থাকলে অসত্য সংবাদ ছাপাবে কেন? বিগ্রেডিয়ার আমিন ও বারীর চোখের আলো হয়ে ছিলেন ওই দুটি পত্রিকা। তাদের কাজই হলো দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক। এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ক্ষমতায় যেতে চাইলে তারা রাস্তায় নামুক, জনগণের কাছে যাক। মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্যু করে আমরা রাজনীতি করি। রাজনীতি করার এতো শখ, ক্ষমতায় যাওয়ার এতো শখ থাকলে- মানুষের ভোট নিয়ে আসুক।

ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আরেকজন জড়িত। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য মাঠে নেমেছিলেন। একজন সম্পাদক লোক যোগাতে নেমেছিল। কিন্তু কেউ আসেনি। ওই ভদ্রলোককে আমিই মোবাইল ফোনের ব্যবসা দিয়েছিলাম। ব্যাংকের এমডি পদ আইন লঙ্ঘন করে ১০ বছর পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। আইন লঙ্ঘন করলেন, মামলায় হারলেন- আর সব দোষ শেখ হাসিনার ওপর। এমডি পদ হারানোর ক্ষোভ পড়ল পদ্মা সেতুর ওপর। আমেরিকার বন্ধুকে দিয়ে অর্থ বন্ধ করালেন।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলো। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম। এখনও সেই প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। একটি এমডি পদ হারানোর ক্ষোভের আগুনে জ্বলল আমাদের বাংলাদেশ। নোবেল পুরস্কার পেয়েও একটি এমডির পদ ছাড়তে পারেন না। ওখানে কী মধু আছে। এতো বড় আন্তর্জাতিক পুরস্কারের তবে মর্যাদাটা কোথায় থাকল? তিনি আরো বলেন, এদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। যে যতই ষড়যন্ত্র করুক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রোধ করতে পারবে না। এ আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আণীত ধন্যবাদ প্রস্তাবটিকে পূর্ণ সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে আসেনি, এটা তাদের রাজনৈতিক ভুল। সেই ভুলের খেসারত জনগণ দেবে না। রাজনৈতিক ভুলের খেসারত তাদেরকেই দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, তাদের খুন-খারাবি, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি দেশের জনগণ গ্রহণ করেনি।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দেখা যাচ্ছে দেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে জাতির সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল উপস্থাপন করেছেন। দেশ যে আত্মসামাজিকসহ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রপতির ভাষণে তা উঠে এসেছে।

নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও নেতা রওশন এরশাদকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট একটি জঙ্গি সংগঠন। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এরা এখনও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যেই হত্যা, খুন, অস্ত্র, বোমাসহ ধরা পড়ছে তাদের সবার গোড়া খুঁজলে দেখা যাচ্ছে আগে হয় ছাত্রশিবির কিংবা ছাত্রদল করেছে। পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তারা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে রক্ষা করছেন।

নির্বাচন বানচাল এবং আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাও দেশের জনগণের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে শত শত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে, বাইতুল মোকাররক মসজিদে আগুন দিয়েছে, শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, ১৮টি ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করেছে, ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে, ৮টি লঞ্চ পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে কোন কিছুই রেহাই পায়নি। কিন্তু তাদের সেই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি দেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বর্তমান সংসদকে অধিক কার্যকর দাবি করে সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সংসদ অধিবেশন দেশের জনগণ দেখতে পারেন। বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল তখন তাদের সংসদে খিস্তিখেউড়, নোঙরা ও অসভ্য বক্তব্য, গালিগালাজ, হুমকি-ধুমকি কোন ভদ্রলোক দেখতে বা শুনতে পারতো না। এখন সেই অবস্থা নেই। দেশের জনগণ এখন সংসদের কার্যবিবরণী কান পেতে শুনতে পারছেন। বিরোধী দল সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনার পাশাপাশি ভাল কাজের প্রশংসা করছে। সংসদে বিরোধী দল গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে।

শিশু হত্যাকারীদের যে দেশের আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে সেই আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সামান্য কারণে শিশু হত্যা করে তারা সমাজের ঘৃণ্য জীব। এর আগে কয়েকজন শিশু হত্যাকারীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। আমি আদালতের কাছে অনুরোধ জানাব, শিশু হত্যাকারীদের যেন তারা সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়। যাতে ভবিষ্যতে কেউ শিশু হত্যার সাহস না পায়।

পাড়া-মহল্লায় শিশু নির্যাতন বন্ধে দেশের মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ করেই শিশু হত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতো ছোট ছোট শিশুদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর জীঘাংসা কেন? এসব খুনীরা সমাজের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট জীব, এদের প্রতি আমি ঘৃণা জানাই। তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষের প্রতি অনুরোধ জানাব, শিশু হত্যার সঙ্গে জড়িত খুনীরা কেউ পালিয়ে থাকলে তাদের ধরিয়ে দিন, সরকার তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবে।

সম্প্রতি গ্যাসের বিষ্ফোরণে পুরো একটি পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে রয়েছেন একটি মাত্র দিয়াশলাইয়ের কাঠি খরচ হওয়ার ভয়ে গ্যাস জ্বালিয়ে রাখেন। একটি কাঠির চেয়ে জীবনের মূল্যে বেশি না। আর যেখানে গ্যাসের চুলা জ্বলবে সেখানের জানালার দরজা খুলে রাখার জন্যও প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি অনুরোধ জানান।

রাস্তায় বের হয়ে দেশের মানুষ কেমন আছে তা দেখে আসতে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশের অবস্থা আগের মতো নেই। এখন প্রযুক্তির যুগ। এখন কোনকিছু দেখতে নিজে যেতে হয় না। কাউকে একটি মোবাইল দিয়ে পাঠালে ঘরে বসেই সবকিছু দেখা যায়। আমি ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টুঙ্গিপাড়ার মাজার দেখতে পাই, অনেক কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করি।

তিনি বলেন, দেশের কোন মানুষ ফুটপাতে না থাকে, ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত না থাকে, সেই নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এসব মানুষকে নিয়ে গিয়ে আমরা ভাল রাখলেও পরে বেরিয়ে এসে সেই পুরনো কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এটাই সমস্যা।

সংসদ নেতা বলেন, আমাদের দেশের মানুষ কথা বলতে পছন্দ করি। এখন ৩২টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছি। আর এসব টিভিতে সমানভাবে কথা বলে যাচ্ছেন, আবার বলছেন কথা বলার স্বাধীনতা নেই! সত্য-মিথ্যা দিয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে সবাই কথা বলেই যাচ্ছেন। কাউকে তো বাধা দেয়া হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করি না। সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছি। মিডিয়ার জন্য আমি যত সুযোগ দিয়েছি, অতীতে কেউ দেয়নি। কিš’ আমিই সবচেয়ে বেশি ভিকটিম। দেশের উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

 

– See more at: http://www.kalerkantho.com/online/national/2016/02/29/330573#sthash.rUORCq29.dpuf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *