অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিলের প্রতি বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে রাতের আধারে মনোনয়নপত্র গ্রহণ, ঋণ খেলাপিদের বৈধ প্রার্থী ঘোষণা, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের আগেই প্রতীক বরাদ্দ করার খবর পাওয়া গেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ২২ ফেব্রুয়ারি বেলা ৫টা পর্যন্ত। শেষ সময় পর্যন্ত রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের যে তথ্য প্রদান করা হয় গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে সেই তালিকার সাথে প্রার্থীর সংখ্যার ব্যাপক গড়মিল পাওয়া যায়। রাজিহার ও বাকাল ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার উদ্দিন প্রথম দিন জানান, বাকাল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৬ জন। গতকাল তার কার্যালয় থেকে উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে প্রেরণ করা তালিকায় ওই ইউনিয়নের প্রার্থীর সংখ্যা দেখা যায় ৯ জন। সংরক্ষিত সদস্য ও সাধারণ সদস্যদের সংখ্যাও প্রথমে দেয়া তালিকার থেকে রাতের আধারে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। যা অন্যান্য ইউনিয়নেও হয়েছে।
তফসিল অনুযায়ী আগামী ২ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর ৩ মার্চ প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা থাকলেও ওই কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন (২৩ ও ২৪) ফেব্রুয়ারি বাকাল ও রাজিহার ইউনিয়নের প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করে দিয়েছেন। তার দেয়া বরাদ্দকৃত প্রতীক হলো-বাকাল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ফুটবল প্রতীক চেয়েছিলেন বজলুর রহমান ও আসাদুজ্জামান খলিফা। সেখানে প্রতীকের জন্য লটারী করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। লটারীতে বজলুর রহমান ফুটবল প্রতীক পান। ওই ওয়ার্ডে অপর প্রতীক প্রাপ্ত প্রার্থীরা হলেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিজুর রহমান বালি (আনারস), লাবণ্য আক্তার (ঘোড়া), সংরক্ষিত আসন ১,২,৩ প্রার্থী হাফিজা ইয়াসমিন (সূর্যমূখী ফুল)। ইউপি সদস্য এচাহাক পাইক (মোরগ)। এদিকে বাকাল ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বিপুল দাসের সমর্থনকারী বিবেক পান্ডে ২৩ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগে ওই ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী মো. তারেক হোসেন এর মনোনয়নপত্রে প্রার্থীর স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ করে তারেকের মনোনয়নপত্র বাতিলের দাবি জানান। এব্যাপারে ডা. বখতিয়ার উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অভিযোগ প্রাপ্তির কথা অস্বীকার করেন। তার স্বাক্ষরিত রিসিভ কপির কথা তাকে জানালে পরে তিনি বলেন, এটা বাতিল করা আমার কাজ নয়। স্বাক্ষর যাচাই করাও আমার কাজ নয়। এটা করবেন আপিল অফিসার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
এদিকে কৃষি ব্যাংক আগৈলঝাড়া শাখা ব্যবস্থাপক শচীন্দ্র নাথ দাস জানান, রিটার্নিং অফিসারগণ কর্তৃক প্রার্থীদের তালিকা পেয়ে তার শাখা থেকে ঋণ খেলাপীদের একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। ওই তালিকায় রাজিহার ইউনিয়নে মিহির বিশ্বাস, শ্যামল ঘটক, বাকাল ইউনিয়নে রমেশ অধিকারী, মহিম বৈষ্ণব, বাগধায় নাসিমা বেগম, মঞ্জু বেগম, গৈলা ইউনিয়নে মানিক গোমস্তা, ফিরোজ আহম্মেদ সেন্টু, সুশান্ত কর্মকার, অনিমা নাগ ঋণ খেলাপী রয়েছেন।
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তারা মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে উল্লেখিত ঋণ খেলাপীদের প্রার্থীতা বহাল রেখেছেন। যাতে অন্য প্রার্থীদের চরম ক্ষুব্ধ করেছে। ঋণ খেলাপীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে গৈলা ও রতœপুর ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন সে ব্যাপারে কোন সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে বলেন, বিষয়টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার থেকে জেনে পরে জানাবেন। ডা. বখতিয়ার উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি লটারীর মাধ্যমে প্রতীক বরাদ্দের কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রতীকগুলি অফিসিয়ালী দেয়া হয়নি। নির্ধারিত তারিখেই প্রতীক বরাদ্দ হবে। সদ্য যোগদানকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রতœপুর ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার মো. সেলিম রেজা নির্ধারিত সময়ের আগে প্রতীক বরাদ্দ ও ঋণ খেলাপীদের প্রার্থীতা বাতিল না হওয়ায় আইনের প্রয়োগ হয়নি বলে জানান।