ঢাকা : বাংলাদেশে আরও স্বৈরাচার দরকার বলে মনে করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছেন, ‘আমার মতো আরো স্বৈরাচারের জন্ম হলে বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ হতে পারত।’
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নিজের (এরশাদ) আত্মজীবনী ‘আমার জীবন, আমার কর্ম’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বইটি সম্পর্কে এরশাদ বলেন, ‘এর মধ্যে প্রতিটি কথা সত্য—কীভাবে আমি স্বৈরাচার হলাম, কেন স্বৈরাচার হলাম। কেন? এখনও বলি, আমার মতো আরও স্বৈরাচার যদি জন্মগ্রহণ করত, তাহলে বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ হতে পারত।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিতির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন এরশাদ, বলেন, ‘আমি যে কাজগুলো করেছিলাম, সেগুলো কি স্বৈরাচারের কাজ? জবাবে তার সমর্থকরা বলেন, ‘না’।
‘স্মৃতিসৌধের কাজ শেষ করেছিলাম, শহীদ মিনারের কাজ শেষ করেছিলাম, পহেলা বৈশাখে ছুটি দিয়েছিলাম, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী শুরু করেছিলাম—এসব কি স্বৈরাচারের কাজ? এরশাদের প্রশ্নের জবাবে আবারও নেতা-কর্মীরা বলেন, ‘না’।
নিজের জীবন বহুধারায় বিভক্ত জানিয়ে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আজ নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেছি। দেশ রক্ষার জন্য রাষ্ট্রনায়ক হয়েছিলাম। জনগণের সেবার জন্য রাজনীতিতে এসেছিলাম। একদিকে ভালোবাসা পেয়েছি, আরেক দিকে সমালোচনা। আমি যদি ক্ষমতায় না আসতাম বাংলাদেশ আদিম যুগে থাকত। বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে আমিই পরিণত করেছিলাম।’
এরশাদ জানান, তার অনেকগুলো বই লিখেছেন মফিজুল ইসলাম। উন্মোচিত বইটি লিখতে ৫ বছর লেগেছে। এজন্য তিনি আরেকটি আলাদা বাড়ি নিয়েছিলেন। সকাল ১০টায় লিখতে বসতেন তিনি, লিখতেন বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তিনি কখনও লিখতেন, কখনও মফিজ লিখতেন। সেজন্য বইটি প্রকাশে ধন্যবাদ প্রাপ্য মফিজের।
১৫টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘আমি কেন কবিতা লিখি, এটাও আমার পাপ। আমি কি প্রকৃতিকে ভালবাসতে পারি না? আমি কি দেশকে ভালবাসতে পারি না? তবে কেন আমি কবিতা লিখতে পারব না?’
আবেগভরা কণ্ঠে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছি। এই বইতে অনেক কিছু লেখা আছে। আমার কর্মের কথা তোমরা স্মরণ করো। আমি তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকব। আমার তো পাওয়ার কিছু নেই। মানুষের মনে বেঁচে থাকতে চাই। মানুষের ভালোবাসায় বেঁচে থাকতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমি যখন গ্রাম-গঞ্জে যাই, মানুষের ভালোবাসায় আপ্লুত হই। গ্রাম-গঞ্জে আমি একলাই চলি। আমার কোনো পুলিশ লাগে না, দেহরক্ষী লাগে না। সেখানে কেউ আঘাত করতে পারবে না।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ‘তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি। তোমরা আমার সন্তানতুল্য। অনেক কষ্ট করছো আমার জন্য, অনেকে আমার জন্য জেল খেটেছো, অত্যাচার সহ্য করেছো। সেই ছবি দেখি প্রতিদিন। মাঝে মাঝে ভাবি, এই সন্তানদের ছেড়ে চলে যেতে হবে। যেতে তো হবেই। আমার সন্তানরা যেন ভালো থাকে। তোমাদের মাঝে আমি বেঁচে থাকব।’
এরশাদ আরও বলেন, ‘একজন প্রধানমন্ত্রী, একজন মানুষের পক্ষে দেশ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে হবে। তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। সব দায়িত্ব একজন সরকারি কর্মচারীর কাছে, এটা গণতন্ত্রের মূল কথা নয়।’
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জন্মগ্রহণ না করলে বাংলাদেশ হতো না। তাকে হত্যা করা হলো। আমিই প্রথম রাষ্ট্রপতি, তার কবরে গিয়ে দোয়া চেয়েছি। এর আগে কেউ যায়নি। আমি কাউকে অসম্মান করিনি। তিনি যে অবদান রেখেছেন, তার স্বীকৃতি দিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ছড়াকার রফিকুল হক দাদুভাই, লেখক মফিজুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ সাত্তার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সাইদুর রহমান টেপা, এসএম ফয়সল চিশতী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।