‘পস’ মেশিনে আরও বড় জালিয়াতি

Slider জাতীয়
untitled-9_195267
ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি করে অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) থেকে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। শুধু এটিএম জালিয়াতিই নয়, আন্তর্জাতিক চক্রটি পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিনেও বড় ধরনের জালিয়াতি করেছে। গোয়েন্দারা বলছেন, এটিএম জালিয়াতিতে এখন পর্যন্ত কয়েকটি ব্যাংকের ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা খোয়া যাওয়ার তথ্য থাকলেও পস জালিয়াতির ক্ষেত্রে সে টাকার অঙ্কটা কোটি ছাড়িয়ে যাবে। পস মেশিন ব্যবহার করে বাংলাদেশে বসে বিদেশি কয়েকটি ব্যাংক থেকে এ টাকা হাতিয়ে নেয় আন্তর্জাতিক চক্র। তাদের সহায়তা করেছে দেশীয় একটি সিন্ডিকেট। ওই জালিয়াতির সহযোগী হিসেবে আন্তর্জাতিক কার্ড সেবাদানকারী কয়েকটি ব্যাংকের বেশ কয়েক ব্যক্তি নজরদারিতে রয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ থেকে ১০ জনকে শিগগির আইনের আওতায় নেওয়া সম্ভব হবে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র  জানিয়েছে। ডিবি পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা  বলেন, এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেফতার পিওটর সিজোফেন (ছদ্মনাম থমাস পিটার) ও দেশের বেসরকারি একটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। ওই তিনজন বেসরকারি একটি ব্যাংকের মার্চেন্ট অ্যাকোয়ার্ড

জোনের পস লেনদেন-সংক্রান্ত কাজের তদারক কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইউক্রেনের নাগরিক এএনডি ও রোমানিয়ার নাগরিক রোমিওকে গ্রেফতারের জন্য শিগগিরই ইন্টারপোলে আবেদন জানানো হচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহজাহান বলেন, এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় রিমান্ডে থাকা চারজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকজনকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পস মেশিন ব্যবহার করে কেনাকাটা এবং অভিজাত হোটেলে থাকা-খাওয়ার বিল পরিশোধ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের জন্য পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন বসানো আছে। এ মেশিনে কার্ড পাঞ্চ করে পাসওয়ার্ড দিলে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সমপরিমাণ টাকা কেটে রাখে। এটিএম বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকা ও ভিড় কম থাকায় জালিয়াত চক্র জনবহুল হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পস মেশিন ব্যবহার করেছে বলে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন।

ব্যাংক কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, পস মেশিন জালিয়াতিতে মূলত বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু দেশে সক্রিয় বিদেশি কয়েকটি ব্যাংক ও আন্তর্জাতিকভাবে কার্ড সার্ভিস দেওয়া ব্যাংকের পস মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। তবে দেশি দুটি ব্যাংকের পস মেশিন ব্যবহার করে কেনাকাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে এমন জালিয়াতি হওয়ায় হয়তো ওই গ্রাহকরা এখনও এ বিষয়ে কিছু বুঝতে পারেননি। কারও কারও লেনদেনে অস্বাভাবিক তথ্য আসার পর ব্যাংকে জানানো হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খোয়া যাওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ তদন্ত করছে।

ডিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা  বলেন, দেশি চক্রটি ছাড়াও পস জালিয়াতির ঘটনায় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের সদস্য ও ইউক্রেনের এএনডি এবং রোমানিয়ার রোমিও। তাদের মধ্যে এএনডি ইউক্রেনের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। জালিয়াতির পর তারা দেশ থেকে পালিয়েছে। এ চক্রটির সমন্বয়ক ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ফরিদ নাবির। ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতির পর তিনিও লন্ডনে পালিয়েছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, এএনডি ও রোমিও গত ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি রোমিও দেশ ছাড়লেও পরের দিন যান এএনডি।

ডিবি পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ব্রিটিশ নাগরিক ফরিদ নাবিরের পাসপোর্টটি ব্রিটেনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আটক করতে পেরেছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ফরিদ লন্ডনে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলেও জানা গেছে।

ডিবির সাইবার ক্রাইম টিমের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজমুল ইসলাম  বলেন, রিমান্ডে থাকা বিদেশি নাগরিকসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম টিমের সদস্যরা এসব বিষয় তদন্ত করে দেখছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *