ঢাকা : এটিএম বুথে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় তথ্য-প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় পোলিশ নাগরিক পিটারসহ চারজনকে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম শুনানি শেষে ওই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক সোহরাব মিয়া।
রিমান্ডকৃতরা হলেন- পোলিশ নাগরিক পিওটর সাজেপেন মাজুরেক, সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের তিন কর্মকর্তা মকসেদ আল ওরফে মাকসুদ, রেজাউল করিম ওরফে করিম ওরফে শাহিন ও রেফাজ আহমেদ ওরফে রনি।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, একটি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশে এই জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। গ্রেপ্তারকৃত পোলিশ নাগরিকও ওই চক্রের সদস্য।
এর আগেও তারা অনেকবার বিদেশি অ্যাকাউন্ট থেকে এটিএম বুথের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। কিন্তু বিদেশে অ্যাকাউন্ট হওয়ায় তা ধরা পড়েনি। কিন্তু এবার বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আত্মসাৎ করায় তা কয়েকটি ব্যাংকের নজরে আসে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, ইউক্রেন ও পোল্যান্ডভিত্তিক চক্র ইউরোপসহ আফ্রিকার দেশগুলোতে সক্রিয় আছে।’
বাংলাদেশে এটিএম বুথে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে একজন বুলগেরিয়ান, একজন ইউক্রেনিয়ান, লন্ডন প্রবাসী একজন বাংলাদেশি এবং সিটি ব্যাংকের ওই তিন কর্মকর্তা জড়িত। তবে ওই দুই বিদেশি ঘটনাটি প্রকাশের আগেই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে পুলিশ।
মনিরুল ইসলাম জানান, পিটার এক বছর আগে ব্যবসায়ীক ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। তিনি মানবপাচার করেন বলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানান। কিছু সংখ্যক মানুষকে তিনি বিদেশেও পাঠিয়েছেন। তবে তার মূল লক্ষ্য ছিল এটিএম বুথে জালিয়াতি করা।
ওই ব্যবসার আড়ালে পিটার বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের লোকজনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে থাকেন। এরই এক পর্যায়ে তিনি সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের এই তিন কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন। ওই তিন কর্মকর্তা পাঞ্চ মেশিনের সাহায্যে নকল কার্ড তৈরি করে পিটারকে সহযোগিতা করেন।
পিটার এক বছর আগে আসার পর এখানে এক বাংলাদেশি মেয়েকে বিয়েও করেন। তাদের একটি সন্তান আছে।
পিটারের মূল নাম থমাস। ইউক্রেনে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি মূলত জার্মান নাগরিক। কিন্তু অন্যের পাসপোর্ট চুরি করে তিনি থমাস থেকে পিটার বনে যান। পিটার নাম ধারণ করে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তার কাছ থেকে পোলিশ পাসপোর্ট এবং জার্মান নাগরিকত্বের একাটি কার্ডও পাওয়া গেছে।
এই আন্তর্জাতিক চক্রটি উন্নত বিশ্বের বহু দেশে এভাবে এটিএম বুথ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই চক্রের সদস্যরা কোনো একটি দেশে বেশিদিন থাকে না। পিটারের ভিসার মেয়াদ মাত্র কয়েকদিন আগে শেষ হয়েছে।’
গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ইউসিবিএল, সিটি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এই চক্রটি। পরে গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা পায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর এ বিষয়ে বনানী থানায় ব্যাংকগুলো মামলা করে। পরে মামলার তদন্ত হাতে নেয় ডিবি পুলিশ।