ঢাকা : একুশ আমাদের গর্ব। একুশ আমাদের অহংকার। এ অর্জন পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশকে যেমন গৌরবময় ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করেছে, তেমনিভাবে পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার সঙ্গে বাংলাভাষাও তার নিজস্ব মহিমায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। অর্জনের প্রতিফলন আমাদের জীবনের সর্বত্রই। ফলে পোশাকেও বর্ণমালার ব্যবহার যেন আমাদের চেতনারই একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একুশের চেতনা বাঙালির পোশাকেও দেখা যায়।
সাম্প্রতিককালে একুশের চেতনার ছোঁয়া লেগেছে দেশের ফ্যাশন ট্রেন্ডেও। বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে পোশাক একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। যে অনুষঙ্গের গহীনে এখন চলছে দেশীয় মোটিফে করা আধুনিকবোধের প্রকাশ। বিভিন্ন উৎসবের পাশাপাশি নগরবাসীরা একুশের চেতনাদীপ্ত হয়ে পোশাকের প্রতিও তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন প্রদান করছে। শহীদ দিবসের মর্মগাথাকে প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারিতে শরীরে জড়িয়ে নিচ্ছেন গভীর ভালোবাসায়। দেশীয় ফেব্রিকে তৈরি হচ্ছে একুশের এসব পোশাক। ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজের আউটলেট থেকে পোশাকগুলো সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
ফাল্গুন যেমন তারুণ্যের উৎসব, তেমনি তা যেন প্রতিবাদের-প্রতিরোধেরও শপথ। এই ফাল্গুনেই মাতৃভাষার জন্য লড়াই করে রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। সেই অমর একুশের চেতনা আমাদের সংস্কৃতিতে এতটাই গভীর যে, শুধু মায়ের মুখের ভাষাতেই নয়, আপাদমস্তক নিজেকে সাজাতে চাই মাতৃভূমির রঙে-রূপে। তাই একুশের দিনে, এই ফাল্গুনে, পোশাকেও থাকে একুশ।
আমাদের চেতনা জাগানিয়া পোশাক-আশাক ও ফ্যাশন সামগ্রী তৈরি করে যাচ্ছেন বিপনন প্রতিষ্ঠানগুলো। মূলত আমাদের জাতীয় চেতনায় বার বার বিকাশের তাগিদ জাগে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একুশের চেতনা জনসাধারণের পৃষ্ঠপোষকতায় ও মিডিয়ার সহযোগিতায় দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। সাদা এবং কালো রঙের সমন্বয়ে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহের ক্ষেত্রেও থাকে ক্রেতাদের একটি বিয়োগাত্মক দিনের স্মরণগাথা। তাই বিয়োগ-ব্যথার বেদনার্ত রঙ কালোই মূলত সবক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
অপরদিকে শাড়ি সম্ভারে মুনমুন’স যোগ করেছে একুশ উপলক্ষে মসলিন ও সুতি শাড়ির ভিন্ন ধরনের সংগ্রহ। সাদা মসলিনে কালো ব্লগ ও স্ক্রিন প্রিন্টের সঙ্গে অ্যামব্রয়ডারি করে শাড়িকে দেয়া হয়েছে একেবারে আধুনিক মাত্রা। সে মাত্রা একুশের সেই সাহসী প্রজ্ঞাকে বহন করছে। এছাড়া সুতি শাড়িতে ব্লগ প্রিন্ট, অ্যামব্রয়ডারি এবং অ্যাপলিকের মিলমিশ ঘটিয়ে তৈরি হয়েছে জ্যামিতিক ও বিমূর্ত নকশার নতুন আবহের শাড়ি। একুশ হলো বাঙালির শোকের দিন আর শোকের রঙ কালো। তাই তো ফ্যাশন হাউজগুলো সেজেছে শোকের রঙে। মুনমুন’স এর ডিজাইনার শাহ্তাজ পারভীন মুমুন বলেন, মহান একুশকে সামনে রেখে আমার করা পোশাকে ফুটিয়ে তুলেছে সাদার উপর শোকের রঙ। কালো শোকের পরিচয় বহন করে। শোক, শ্রদ্ধা ও গৌরবের এ দিনটি পালনে নানা আয়োজনের সঙ্গে একুশের দৃপ্ত চেতনার স্পর্শ পোশাকে এসেছে বহু বছর ধরেই।
সাদা কালো পোশাকের সঙ্গে কপালে পরে নিন একটি বড় কালো টিপ। বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে হাতে সাদা কালোর মিশ্রণে কিছু কাচের চুড়ি পড়তে পারে নারীরা।