কাল থেকে আবারো বাড়ছে রেলের ভাড়া

Slider জাতীয়

 

train_691188249

 

 

 

 

ঢাকা : রেলওয়ের লোকসান কমাতে আগামীকাল শনিবার থেকে সারাদেশের রেলওয়ের বর্ধিত ভাড়া কার্যকর করা হচ্ছে। নতুন ভাড়ায় প্রতিকিলোমিটার ৩৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগে ছিলো ৩৬ পয়সা। গত ৪ ফেব্রুয়ারি ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির একটি পরিপত্র জারি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। যা আগামীকাল থেকে কার্যকর করা হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, যাত্রী পরিবহন ছাড়াও পার্সেল, মালামাল ও কন্টেইনার পরিবহনে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ভাড়ায় রুটভেদে সাড়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে শোভন শ্রেণির ভাড়া ২৬৫ টাকা থেকে বেড়িয়ে হবে ২৮৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০ থেকে ৩৪৫, এসি চেয়ার ৬১০ থেকে ৬৫৬, এসি সিট ৭৩১ থেকে ৭৮৮ ও এসি বার্থ ১ হাজার ৯৩ থেকে ১ হাজার ১৮৯ টাকা হবে।

এছাড়া ঢাকা-খুলনা রুটে শোভন শ্রেণির ভাড়া ৩৯০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ার ৪৬৫ থেকে ৫০৫, এসি চেয়ার ৮৯১ থেকে ৯৬১, এসি সিট ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ১৫৬ ও এসি বার্থ ১ হাজার ৫৯৯ থেকে বেড়ে হবে ১ হাজার ৭৩১ টাকা। ঢাকা-সিলেট রুটে শোভন শ্রেণির ভাড়া হবে ২৬৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০, এসি চেয়ার ৬১০, এসি সিট ৭৩৬ ও এসি বার্থ ১ হাজার ৯৯ টাকা।

ঢাকা-রাজশাহী রুটে উল্লেখিত শ্রেণিগুলোর ভাড়া হবে যথাক্রমে ২৮৫, ৩৪০, ৬৫৬, ৭৮২ ও ১ হাজার ৬৮ টাকা। অন্যান্য রুটেও প্রায় একই হারে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি রেলওয়ের প্রতিটি শ্রেণিতে নূন্যতম ভাড়া ৫-১০ টাকা হারে বাড়ানো হয়েছে।

এছাড়া পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৭-৯ শতাংশ হারে। এতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আইসিডি পর্যন্ত ওজন ও দৈর্ঘ্যভেদে আগে বিভিন্ন ধরনের কনটেইনার পরিবহন ভাড়া ছিল ৯ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকা। এখন তা বাড়ানো হয়েছে ৯ হাজার ৭০০ থেকে ২২ হাজার ৬০০ টাকা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের আইসিডি পর্যন্ত ফিরতি পথের কনটেইনার পরিবহন ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

এ ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. ফিরোজ সালাহ্ উদ্দিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘রেলওয়ের নতুন ভাড়া সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে গত ৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর রেলওয়ে বিভাগের প্রস্তুতি শেষে ২০ ফেব্রুয়ারি এটি কার্যকর করা হবে। ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের প্রেক্ষিতেই তা বাড়ানো হয়েছে।’

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শরিফুল আলম জানান, রেলের ভাড়া বৃদ্ধির টিকিট আজ শুক্রবার থেকে বিক্রি হয়েছে। সকল রেল স্টেশনে নতুন ভাড়ার চার্ট টানিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামীকাল শনিবার থেকে সকল রুটে বর্ধিত ভাড়ায় যাত্রীদের চলতে হবে।

 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯৯২ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত রেলওয়ের ভাড়া ১৬ দফা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরপর রেলওয়ে লোকসানের কথা বলে সর্বশেষ ২০১২ সালে ১ অক্টোবর থেকে ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন বলা হয়েছিল ভাড়া বাড়ানোর সাথে সাথে রেলওয়ে সেবার মানও বাড়ানো হবে। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই বছর অতিক্রম হলেও বাড়েনি রেলওয়ের সেবার মান।

২০১২ সালে ভাড়া বাড়ানোর পরিপত্রে বলা হয়, রেলের যাত্রী পরিবহন ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ২৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৬ পয়সা করা হয়েছে। যা বর্তমানে প্রতিকিলোমিটার ভাড়া বাড়িয়ে ৩৯ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়।

ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবে বলা হয়, গত আড়াই বছরে রেলের পরিচালনা ও প্রশাসনিক ব্যয় অনেক বেড়েছে। রেলের ভাড়া বৃদ্ধির পর জ্বালানি তেলের মূলও বৃদ্ধি করা হয়। এতে ২০১৩ সালে বাস ও লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়।

এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের ভাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়ে অনেক কম। তাই ভাড়া বৃদ্ধি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত মনে করছে রেলওয়ে। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতায় রেলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচন পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সহিংসতায় রেলের ৭০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়। নাশকতার ভয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যাত্রী পরিবহন হ্রাস পায়। এছাড়া চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও রেলের বেশকিছু নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি যাত্রী কমে যাওয়ায় আয় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় হ্রাস পেয়েছে বলেও রেলওয়ে সূত্র জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *