গ্রাম বাংলা ডেস্ক: প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়েই নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। শপথ গ্রহণের দু’দিনের মাথায় তিনি বিতর্কিত হন ‘হু ইজ বিএনপি’ মন্তব্য করে। তার উপাধি দেয়া হয় ‘ক্ষ্যাপা মন্ত্রী’ হিসেবে। সবশেষ তিনি তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেন সাংবাদিক সমাজকে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করে। তার একের পর এক এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রত সরকার ও দলের নেতাকর্মীরা।
মন্ত্রিসভার এক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিষয়টি তোলা হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি উঠলে প্রধানমন্ত্রী তাকে সতক করেন।
সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাকে নিয়ে বিব্রত। তিনি কখন কী বলেন এ নিয়ে সবাই আতঙ্কিত থাকেন। তাছাড়া নানা সময় তার এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রত মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।
শপথ গ্রহণ করার পর সচিবালয়ে প্রথম কর্ম দিবসেই তিনি বিতর্কের জন্ম দেন। সচিবালয়ের প্রবেশ পথে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকরা অন্যসব মন্ত্রীর মতো তাকেও ঘিরে ধরে নানান প্রশ্ন করেন। একজন সাংবাদিক তার কাছে বিএনপি কর্তৃক পুনঃনির্বাচনের দাবির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চান। আর এতে মন্ত্রী মহসিন আলী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন,‘ হু ইজ বিএনপি’? প্রথম দিনেই মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যে সাংবাদিকরা অবাক হন। সভামঞ্চে ধূমপান করেও ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন মন্ত্রী মহসিন আলী। বোরকা ও হিজাব নিয়ে তার তীর্যক মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হন নারী সমাজ। তিনি মৌলভীবাজারে জাতীয় মহিলা সংস্থার এক অনুষ্ঠানে বলেন, নারীকে হতে হবে নানা গুণে গুণান্বিত। হিজাব পরলে চলবে না, নারীকে মুখ দেখাতে হবে। তার বক্তব্যের পর বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিছিল করে তার অপসারণ দাবি করে।
গত ৩ আগস্ট হবিগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বলেন, তছবিহ পড়া আর শিরনি খাওয়া ছাড়া মাদরাসা ছাত্রদের কোনো কাজ নেই। তিনি বলেন, মাদরাসার ছাত্ররা সারারাত তছবিহ পড়ে সকালে এক হাজার টাকা নিয়ে যায়। মাদরাসা শিক্ষা মানসম্মত নয়। মাদরাসার ছাত্ররা কামিল পাস করে ইংরেজিতে প্রেসিডেন্টের নাম লিখতে পারে না। মাদরাসার শিক্ষার দরকার নেই, মাদরাসার যে ছাত্র ইংরেজিতে নাম- ঠিকানা লিখতে পারে না, তাদের দিয়ে আমাদের কোনো লাভ নেই। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। মাদরাসার হুজুর মানুষের বাড়ি দাওয়াত খাওয়া ছাড়া কোনো কাজ করেন না। আগামীতে আমি হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এলাকার প্রত্যেকটি মাদরাসা পরিদর্শন করে যথাযথ শিক্ষার মান না পেলে সুপাদের মাদরাসা থেকে বের করে দেব।
সর্বশেষ গত শনিবার সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির আলোচনা সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাংবাদিকদের আক্রমণ করেছেন। তিনি তার বক্তব্যে সাংবাদিকদের ‘খবিশ ও চরিত্রহীন বরে গালি দিয়েছেন। সাংবাদিকদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলীকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ আখ্যায়িত করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকদের দুটি সংগঠন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে এই মন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, সৈয়দ মহসিন আলী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার- ৩ (সদর-রাজনগর) আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।