গ্রাম বাংলা ডেস্ক: আমাদের যত সমস্যা তার মধ্যে অন্যতম হল আইনের শাসন না থাকা। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও আইনের শাসন থাকলে আমরা উন্নত জাতিতে পরিণত হতে পারতাম। শ্রমিকরা তিন মাস কাজ করলে বেতন দেওয়া হয় ২ মাসের। তার প্রতিবাদ করলে অমানবিকভাবে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে কারখানা থেকে বের করে দেয়া হয়। এর পরেও পুলিশ কমিশনার বলে তারা কোন বাড়াবাড়ি করেনি। আজ বিকাল ৫টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে গুণিজনের কদর নেই যদি না সে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়। আবু সাঈদ চৌধুরী যদি কোন দলের সদস্য হতেন তাহলে আজ তার স্মরণসভা এত ছোট আয়োজনে হতনা। এই বিদগ্ধজনকে আমরা যথাযথ সম্মান দিচ্ছিনা। এটা আমাদের জন্য সুখকরনা। বর্তমানে এমন সমাজ তৈরী হয়েছে যেখানে সত্যকথা বলে বসবাস করা কঠিন হয়ে গেছে। রাষ্ট্রকে ভুল পরামর্শকদের কাছ থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। তিনি সরকারকে জাতীর শ্রেষ্ট সন্তানদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস ভালভাবে উদযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, কবি আসাদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ।
অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ বলেন, আজকের সমাজে সর্বত্রই মানবতা ভুলন্ঠিত হচ্ছে। এমন একটি সময়ে তাকে খুবই মনে পড়ছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি যে অবদান রেখেছেন তা কোনদিন মুছে যেতে পারেনা। তারমত সাহসী লোকের খুবই অভাব। এসকল পূজনীয় মানুষদের আজ রাষ্ট্রযন্ত্র মূল্যায়ন করছেনা।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়েও বসে থাকতে পারেননি। পৃথিবির বিভিন্ন দেশে জনমত তৈরীর জন্য কাজ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধে কুটনৈতিক রণাঙ্গনে তার অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।
কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, এই সাহসী মানবাধিকার কর্মী যদি আজ পৃথিবিতে বেচে থাকতেন তাহলে বিহারী ক্যাম্পে ১১জন জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা সম্ভব হতনা। বর্তমান সমাজে স্কুলের জমি দখল হচ্ছে। দোষীদের বাদ দিয়ে চার্যশিট দেওয়ার শুরু হয়েছে। রামুতে মন্দিরে হামলা হয়েছে। সরকার সেখানে নতুন মন্দির করে ক্ষতিপূরণ দিলেও কাউকে গ্রেফতার করেনি। টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণ হয়না।
মামুনুর রশিদ বলেন, যারা ক্ষমতায় আছেন তারা ৭/৮ বছলে ২ হাজার গুণ সম্পদ অর্জন করে ধনী হচ্ছেন। অন্যদিকে যারা ক্ষমতায় যাবার জন্য আন্দোলন করছেন তারাও আন্দোলনে লোক পাচ্ছেননা। কারণ জনগন বুঝে গেছে তারা সম্পদ অর্জনের জন্যই ক্ষমতায় আসতে চান।
এর আগে মরহুমের লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধের সংকলন ‘স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি ও অন্যান্য’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলা একাডেমির উপ পরিচালক মাহবুব আজাদ, উৎস প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী মোস্তফা শরীফ প্রমুখ।