এ প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এতদিন এ সীমান্ত দিয়ে শুধু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনের সুযোগ ছিল। এখন থেকে উলি্লখিত দেশের নাগরিকরাও যাতায়াত করতে পারবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল আশা করেন, বাংলাবান্ধা সীমান্ত উন্মুক্ত হলে চার দেশের মধ্যে সড়কপথে যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। তিনি জানান, এরই মধ্যে চার দেশের মধ্যে যান চলাচল চুক্তি হয়েছে। এর ফলে এ অঞ্চলে যোগাযোগ আরও সহজ হয়ে আসবে।
বহু প্রতীক্ষার পর চার দেশের সংযোগস্থল বাংলাবান্ধা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হতে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাবান্ধা বন্দর ও ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের উদ্বোধন করেছিলেন বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গত বছরের ১৬-১৭ নভেম্বর ঢাকায় ভারত ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাবান্ধা দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান জানান, সিদ্ধান্ত গ্রহণের খুব কম সময়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে কাস্টম, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কাঠামো বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, চারদেশীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে চারটি দেশের সড়কপথে দূরত্ব কম। এ স্থলবন্দর খুলে দেওয়া হলে দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়বে। তবে আরও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। বর্তমানে ছয়টি স্থলবন্দর দিয়ে ভ্রমণে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারেন। বাংলাবান্ধা খুলে দিলে এর সংখ্যা দাঁড়াবে সাতটিতে। স্থলবন্দরগুলো হলো : লালমনিরহাটের বুড়িমারী, পশ্চিমবঙ্গের টেংরাবান্দা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ (বিপরীতে ভারতের মালদহ), দিনাজপুরের হিলি (বিপরীতে ভারতের দিনাজপুর), যশোরের বেনাপোল (বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বনগাঁও), সাতক্ষীরার ভোমরা (বিপরীতে ভারতের ২৪ পরগনা), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া (বিপরীতে ত্রিপুরার আগরতলা)।
সূত্র জানায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনের পর সহজেই চার দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। বাংলাবান্ধা থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব হবে ১০ কিলোমিটার, নেপালের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার ও ভুটানের দূরত্ব হবে মাত্র ৬০ কিলোমিটার। চার দেশের মধ্যে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে যোগাযোগের রুট হবে- ঢাকা থেকে হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতের ফুলবাড়ী-পানিটাঙ্কি দিয়ে নেপালের কাকরভিটা হয়ে কাঠমান্ডু। ঢাকা থেকে হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতের ফুলবাড়ী-শিলিগুড়ি হয়ে নাগারকতা দিয়ে ভুটান। এ স্থলবন্দর ছাড়া অন্য রুটে যেভাবে চার দেশের যোগাযোগ স্থাপন হবে সেগুলো হচ্ছে- ভারতের কলকাতা থেকে পেট্রাপোল হয়ে বাংলাদেশের বেনাপোল-যশোর-ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর-বুড়িমারী হয়ে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা-শিলিগুড়ি এবং ঢাকা থেকে হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর-বুড়িমারী হয়ে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা-জায়াগন হয়ে ভুটানের ফুয়েন্টসোলিং হয়ে থিম্পু পর্যন্ত। এ ছাড়া ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ঢাকা-সরাইল-সিলেট-তামাবিল হয়ে ভারতের ডাউকি-শিলং-গৌহাটি হয়ে ভুটানের সামদ্রুপ ঝংকার পর্যন্ত।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ঘোষিত চার দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক সীমান্তপথে স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে বাংলাবান্ধা অন্যতম। বাংলাবান্ধা বন্দর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে ভারতের শিলিগুড়ি শহর। সেখান থেকে রেল, আকাশ ও সড়কপথে ভারতের যে কোনো প্রান্তে অনায়াসে যাতায়াত সম্ভব। ব্যবসায়িক, পর্যটনসহ সব সুবিধা শিলিগুড়ি শহরে বিদ্যমান। আর ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত রাজ্যগুলোতে প্রবেশের একমাত্র করিডোর হচ্ছে শিলিগুড়ি শহর।
সূত্র জানায়, নেপাল ও দার্জিলিংয়ে প্রচুর বিদেশি পর্যটক সারা বছর বেড়াতে আসেন। বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু হলে তারা বাংলাদেশের সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, পতেঙ্গা, কুয়াকাটা এবং অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখার ব্যাপারে আগ্রহী হবেন। এরই মধ্যে জার্মানি ও চীনের কিছু শিল্পপতি এ অঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনে অর্থায়ন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।