আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, আগামী ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন। এ জন্য চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের বেলায় তৃণমূল নেতারা রীতিমতো গলদঘর্ম হচ্ছেন। দফায় দফায় বৈঠক করেও সিংহভাগ ইউনিয়নেই প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিদ্রোহের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সুজিত রায় নন্দী এবং এসএম কামাল হোসেনসহ দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করেছেন। এ সময় বলা হয়েছে, পৌরসভা নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ইউপি নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে। এর পরই পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ জানিয়েছেন, পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী একশ’ নেতার কাছে গতকাল শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ নোটিশ পাওয়ার পর ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব পাঠাতে হবে। এর আগেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
শোকজ নোটিশ পাঠানোর তালিকায় বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী মেয়রও রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- বরগুনার শাহাদাত হোসেন, সিলেটের গোলাপগঞ্জের সিরাজুল জব্বার চৌধুরী, কানাইঘাটের নিজাম উদ্দিন আল মিজান, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার শফি আলম ইউনুছ, ময়মনসিংহের ত্রিশালের এবিএম আনিছুজ্জামান, নেত্রকোনার মদনের আবদুল হান্নান শামীম, মানিকগঞ্জের গাজী কামরুল হুদা সেলিম, ফরিদপুরের বোয়ালমারীর মোজাফফর হোসেন বাবলু মিয়া, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের সাদেকুর রহমান, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের আবদুল কাইয়ুম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের এআরএম আজরী মোহাম্মদ কারিবুল হক রাজীন, বগুড়ার ধুনটের এজিএম বাদশাহ, পাবনার চাটমোহরের মির্জা রেজাউল করিম দুলাল, দিনাজপুরের বিরামপুরের লিয়াকত আলী সরকার টুটুল, মেহেরপুরের গাংনীর আশরাফুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জীবননগরের জাহাঙ্গীর আলম ও নড়াইলের কালিয়ার ফকির মুশফিকুর রহমান লিটন।
শোকজ নোটিশে গত ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, শোকজ নোটিশপ্রাপ্ত সবাই গত ৩০ ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচনে দলের স্থানীয় সরকার/পৌরসভা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। এটা দলের আদর্শ, ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ শোকজ নোটিশপ্রাপ্তরা স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দলের ঘোষিত আদর্শ, নীতিমালা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, নিয়মাবলি, শৃঙ্খলা, গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড করেছেন। এ কারণে কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সর্বসম্মতভাবে গঠনতন্ত্রের ৪৬(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শোকজ নোটিশপ্রাপ্তদের দল থেকে চূড়ান্তভাবে কেন বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে দলের তৃণমূল নেতারা প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা গতকাল প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাঠাতে শুরু করেছেন। নরসিংদী জেলা থেকে প্রথম তালিকা পাঠানো হয়েছে। এ জেলার সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক জানিয়েছেন, তৃণমূল নেতারা নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে সাবের উল হাই এবং গজারিয়া ইউনিয়নে বদরুজ্জামান ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার/পৌরসভা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে প্রথম ধাপের নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। যেসব জেলার তৃণমূল নেতারা একক প্রার্থীর নাম পাঠাবেন, সেখানে রদবদল হবে না। তবে একাধিক প্রার্থীর নাম পাঠানো হলে স্থানীয় সরকার/পৌরসভা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।