ঢাকা: শীতকালীন সবজিতে বাজার এখনো সবুজ, দামও বেশ স্বাভাবিক। তবে তরকারির অন্যতম অনুসঙ্গ রসুনের বাজার খানিকটা চড়া হয়েছে। রাজধানীতে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন গত শনিবার বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকায়। আজ (শনিবার) প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। এদিকে পেয়াজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজিতে দুই টাকা কমেছে। রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এমনটিই জানিয়েছেন।
এদিকে সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাব মতে, আমদানি করা প্রতিকেজি রসুনের দাম এক সপ্তাহর ব্যবধানে বেড়েছে ২০ টাকা। সংস্থাটির হিসাবনুযায়ী শুক্রবার আমদানি করা প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হতো ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা। কিন্তু কী কারণে রসুনের দাম বেড়েছে সে সম্পর্কে সংগঠনটি কোনো কিছু জানায়নি।
আদা-রসুনের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বাজারে দেশি রসুনের সঙ্কট অপরদিকে চায়না থেকে রসুন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আর এ কারণে দেশে রসুনের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা। নতুন যারা রসুন আমদানি করছে তারা বেশি দামে কিনছে বলে বেশি দামেই বিক্রি করছে। তবে দেশি রসুন উঠা শুরু করলে দাম কমবে বলে জানিয়েছেন তারা।
শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রানী বাণিজ্যালয়ের সত্ত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা জানান, বতমানে রসুন চড়া দামে আমদানি করতে হচ্ছে তাই রসুনের বাজার চড়া। তবে যেসব ব্যবসায়ি আগে রিজাভ করে রেখেছিল তারা অতিরিক্ত লাভ করছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বেশির ভাগ পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে দেশি রসুন রিজার্ভ নেই, সঙ্কট অপরদিকে চায়না থেকে বেশি দামে রসুন কিনতে হচ্ছে। আর এ কারণে দেশে রসুনের দাম বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন আগেও চায়না থেকে ১৪০ টাকা দরে রসুন কিনেছি। বর্তমানে চায়না রসুন ১৫০ টাকা কেনা পড়ে। তাই এখন আমদানি কমেছে। তবে দেশি নতুন রসুন ওঠা শুরু করলে দাম কমবে বলে জানান তিনি।
এদিকে বাজারে দেশি প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। প্রতিকেজি আদা ৭০ টাকা থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সয়াবিন তেলের দাম অপরিবতিত রয়েছে। বাজারে প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ৮৫ টাকায়। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ৪৫৫ টাকায়। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯২ টাকা থেকে ৯৫ টাকায়।
এদিকে বাজারে শীতকালীন সবজির দাম স্বাভাবিক রয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, স্বামীবাগ, কাপ্তানবাজার, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতিকেজি বেগুন ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকায়, সাদা গোলাকার বেগুন ২৫ টাকায়, মরিচ ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায়, টমেটো ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায়, গাজর ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকায় , খিরাই ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকায়, করলা ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায়, ঝিঙা ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, পটল ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, ঢেঁড়স ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, ওস্তা ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়, চিচিঙ্গা ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায়, পেঁপে ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায়, দোন্দল ২৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, শালগম ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকায়, মূলা ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকায়, বটবটি ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, কচুর ছড়ি ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায়, লতি ২০ টাকা ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতিটি ফুল কপি ২০ টাকা (ছোট) থেকে ২৫ টাকায় (বড়) বিক্রি হচ্ছে। পাতা কপিও একই দামে বেচাকেনা হতে দেখা গেছে। এদিকে প্রতিকেজি আলু ১৫ টাকা ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতিটি বড় লাউ ৩০ টাকায় এবং ছোট লাউ ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ছোট কুমড়া ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা এবং বড় কুমড়া ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, আড়তে শীতকালিন পণ্য আমদানি বেশি। তাই দামও হাতের লাগালেই রয়েছে।
কাপ্তান বাজারের কাঁচাপণ্যের ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দিন জানান, কাচাপন্যের দাম কম থাকলে অনেক সময় মালামাল বিক্রি হয় না, পচে যায়। এতে লোকসান দিতে হচ্ছে।
এদিকে বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা থেকে ২৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ২২ টাকা থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি হাঁসের ডিম ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির একশ ডিম ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায় (একশ)।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি (সাদা) ১৪০ টাকা, (লাল) ১৪৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গরুর মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি খাসির মাংস ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার আড়তের ব্যবসায়ী নেতা নুরু হাজী বাংলামেইলকে জানান, কাচা পণ্য যে হারে আমদানি হচ্ছে সে হারে চাহিদা নেই। তাই অনেক সময় আড়তে কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি হচ্ছে বলে ক্রেতারা স্বস্তায় কাচাপণ্য কিনতে পারছে বলে মনে করছেন তিনি।