আজও শুনতে চাই বাঘের গর্জন

Slider খেলা

 

untitled-5_192440

 

 

 

 

 

এও তো এক ধরনের সাধনাই, যেখানে আবেগ-আকুতি-মোহ-বিষণ্নতা দূরে ঠেলে শুধু শৃঙ্গচূড়ায় লক্ষ্য স্থির রাখতে হয়। দুই বছর ধরে মিডিয়ার আড়ালে এমনই অনেক বেলা কঠোর অনুশীলন, সুশৃঙ্খল যাপন আর ক্রিকেটীয় দক্ষতায় নিজেদের তৈরি করেছে যুবার দল। আজ বিজয় পতাকা নিয়ে সেখান থেকেই মাত্র একধাপ দূরে দাঁড়িয়ে মেহেদী হাসান মিরাজরা। আজ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে স্বাগত জানিয়েই মিরপুর তার বেদি
সাজিয়ে রেখেছে ঘরের ছেলেদের জন্য। ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম আইসিসির কোনো আসরে সেমির লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ। কেউ বলুক কিংবা না বলুক, সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদ যে প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে, তা আন্দাজ করেই মেপে নিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাই টেলিফোনে জুনিয়র টাইগার মিরাজকে মাঠের বাইরের সবকিছু থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। দুবাই থেকে ফোন করে মুশফিকুর রহিমও জয়-পরাজয়ের বাইরে শুধু খেলাটিকেই উপভোগ করতে বলেছেন ছোট ভাই মিরাজকে। বিশ্বকাপ অভিযানের এই যুবা যাত্রীদের ধ্যান যাতে বিঘ্ন না হয়, তার জন্য সবাই চেষ্টা করছেন প্রত্যাশার সব চাপ থেকে মিরাজদের দূরে রাখতে।
কিন্তু চাইলেই কি পারা যায়! গতকাল মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনেই স্কুলড্রেস পরা একদল কিশোর এসেছিল কোথায় সেমিফাইনালের টিকিট বিক্রি হয় জানতে। তাদের প্রত্যেকেরই বিশ্বাস, সেমিতে বাংলাদেশই জিতবে। এতটা আত্মবিশ্বাসের কারণ আছে বটে; এই বিশ্বকাপের আগেই তো ক্যারিবীয় এই দলটিকে টানা তিন ম্যাচে হারিয়েছে মিরাজরা। ভীরু ভীরু মুখগুলোতে তখনই স্পিন আতঙ্ক সেঁটে দিতে পেরেছিল শাওনারা। কিন্তু সেই দলটি যে আর নেই! বিশ্বকাপের দুই সপ্তাহ আগে তারা বাংলাদেশে এসেছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফতুল্লা হয়ে মিরপুর_ এখানকার সব মাঠের পিচও পড়ে নিয়েছে ক্যারিবিয়ান ছেলেরা। তার ওপর শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে ২২৭ রানে বেঁধে এখন তো তারা বুক ফুলিয়ে অনুশীলন করছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই কিশোর দলটির মূল শক্তিই পেস অ্যাটাক। অ্যান্টিগার ছেলে শাহিম জোসেফ তো ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন। বার্বাডোজের আরেক পেসার চেমার হোল্ডারও পিচে ঘাসের ডগা দেখলে সাপের মতো ফোঁস করে উঠতে পারেন। সে সঙ্গে ওদের টপ অর্ডারে পোপে, ইমলাচ, অধিনায়ক হেটমেয়ার ওভার দ্য টপ খেলতে পছন্দ করেন। পাকিস্তান সেদিন কোয়ার্টারে এই উইন্ডিজের ঝাঁজ বেশ টের পেয়েছে। কেউ কেউ তো এমনও বলতে শুরু করেছেন, সত্তর দশকের ক্যারিবিয়ান পেসারদের উত্তরসূরিরা আছেন এই দলটিতে! কিন্তু মিরাজরা জানেন, কোন চালে কিস্তিমাত করতে হয়। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলটিই যে হারতে হারতে রেহাই পেয়েছিল। জিম্বাবুইয়ান স্পিনের সামনে ২২৬ রানে ইনিংস শেষ হয়েছিল তাদের। যদিও শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত একটি রানআউটে কোয়ার্টারের টিকিট পায় তারা। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলটিকে হারানোর কৌশল করে নিয়েছেন বাংলাদেশের কোচ মিজানুর রহমান বাবুল ও তার পরামর্শক স্টুয়ার্ট ল। ছেলেদের সতর্কও থাকতে বলা হয়েছে ‘রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে’। কিছুতেই রানআউট হওয়া চলবে না। এ আসরের শুরুর ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার পর এই কোনো টেস্ট দলের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মাঝে স্কটল্যান্ড, নামিবিয়া আর নেপালকে হারানোর মধ্যে অবশ্য বেশি আত্মবিশ্বাস পুঁজি হয়েছে।

এই আসরের সব পরিসংখ্যান ঘেঁটে তারা দেখেছেন, শুরুতে আড়াইশ’ করলে কোনো দলই তাড়া করতে পারে না। তাই টস জিতে ব্যাটিং নেওয়াটাই শ্রেয়। যদিও সকালের প্রথম এক ঘণ্টা কুয়াশায় ভেজা পিচে ক্যারিবিয়ানরা সুবিধা পেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ভারতের দেখানো মডেলই মিরাজদের সামনে ঝুলিয়ে দিয়েছেন স্টুয়ার্ট ল। শুরুতে রানের গতি শ্লথ থাকলেও উইকেট দেওয়া চলবে না। আর যদি আগে বোলিং করতে হয়, তাহলে শুরুর ওই এক ঘণ্টা কাজে লাগাতে হবে। কারণ, বাংলাদেশর হাতেও আছে ঘণ্টায় ১৩৭ কিলোমিটার গতির বোলার_ পেসার মেহেদি হাসান রানা। বাঁহাতি এই পেসারের ঝাঁজ আগের ম্যাচে টের পেয়েছে নেপাল। সে সঙ্গে সাইফুদ্দিন তো রয়েছেই। ৯ উইকেট শিকার করে এরই মধ্যে সে সাড়া ফেলে দিয়েছে প্রতিপক্ষের ড্রেসিরুমে। আজ এই দুই পেসার নিয়েই একাদশ সাজানোর ইঙ্গিত মিলেছে। শুরুতে এদের দু’জন ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার পর একের পর এক চলবে স্পিনহানা। শাওন গাজী, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাঈদ সরকার আর আরিফুল ইসলাম জনি_ ঘূর্ণিজালের ফাঁদে ফেলানো হবে ক্যারিবীয়দের।
এরই মধ্যে স্পিনারদের জন্য ঘূর্ণি পিচের অর্ডারও দেওয়া হয়েছে, মিরপুরের পিচে যেটুকু ঘাস ছিল ভারত-শ্রীলংকার ম্যাচে সেগুলোও কাল বিকেলে উধাও! কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা ঘাস ছাটিয়ে ন্যাড়া করে পিচ তৈরি দেওয়ার অর্ডারটা ভালোভাবেই পালন করেছেন। ঘরের ছেলেদের জন্য বিজয়মঞ্চ তৈরি করে রাখা হয়েছে, অপেক্ষা এখন শুধুই ইতিহাসের একটি নতুন পাতা রচনার। সেমিফাইনাল জিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের সঙ্গে ফাইনালের দুয়ারে পেঁৗছার। আত্মবিশ্বাসী মেহেদী হাসান মিরাজ। কতটা ? বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মিরাজ সেমিফাইনালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাঠে আসতে বলব ? ‘প্রধানমন্ত্রীকে ফাইনালের দিনই আমন্ত্রণ জানান… ওই দিন আমরাই মাঠে থাকব’_ মিরাজের এই আত্মবিশ্বাসই বলে দেয় লক্ষচ্যুত হবে না তার দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *