গোয়েন্দা নজরদারিতে কয়েক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিব

Slider জাতীয়

 

88888_192442
 

 

 

 

 

সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হওয়া, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিসহ কিছু অভিযোগ থাকায় তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে দুটি গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরই মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের আমলনামা তৈরি করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। পাশাপাশি কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাজও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তারা। শিগগিরই তাদের কাজের একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন সরকারের উচ্চপর্যায়ে জমা দেওয়া হবে। সরকারি একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সংস্থাগুলো নিয়মিতভাবেই এসব বিষয়ে নজর রাখে। তবে সরকারের কাজে গতি আনার জন্য সম্প্রতি কিছু বিষয়ে নজরদারি করার জন্য একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে নিয়মিতভাবেই বিষয়গুলো জানানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ ছাড়া প্রাপ্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর বাইরে নিয়মিতভাবে গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ন সরকারকে দেয়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি কয়েকজনের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এসেছে। প্রধানমন্ত্রী এগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে তেমন কিছুই নয়।
সূত্র জানায়, শীর্ষ পর্যায়ে কিছু কিছু কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অবহেলাসহ নানাবিধ কারণে কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে কাঙ্ক্ষিত গতি আসছে না। মন্ত্রণালয়ের অনিষ্পন্ন কাজ মাসের পর মাস ফেলে রাখা হচ্ছে। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পও বাস্তবায়নে দেখা গেছে ধীরগতি। দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে কোনো কোনো সচিব পদোন্নতি পেলেও তারা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো ফাইলে নানা ত্রুটি ধরা পড়ছে। সম্প্রতি সচিবদের দক্ষতা ও উপস্থাপিত সারসংক্ষেপ দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবের কথা জানিয়ে এরই মধ্যে সচিবদের কয়েক দফায় সতর্কও করেছেন মুখ্য সচিব। দক্ষতা অনুযায়ী সচিবদের দফতর পুনর্বণ্টনের চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের।

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ  বলেন, সচিবদের কাজের গতি আরও বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করা হচ্ছে। তাদের নানা ধরনের দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে মন্ত্রী-সচিবদের মধ্যে বনিবনা না হওয়া, স্বজনপ্রীতিসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো মন্ত্রী-সচিবের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দ্বন্দ্ব চলছে। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার ও উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের দ্বন্দ্ব ওপেন সিক্রেট।

ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মধ্যে তেমন বনিবনা নেই। মন্ত্রী অধিকাংশ ক্ষেত্রে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করেন। একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিমন্ত্রী বিদেশ সফরে থাকাকালে রমনা মৌজায় একটি জমির ইজারা নবায়নের সময় বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রী এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন। খুলনার দুই সরকারি আইনজীবী জেলাপর্যায়ে অর্পিত সম্পত্তির ট্রাইব্যুনালে সরকারের পক্ষে যথাযথ ভূমিকা না রাখায় সরকারি সম্পত্তি বেহাত হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সঙ্গে ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও সচিব মুশফেকা ইকফাতের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রীর অনেক কাজে বাধা হন প্রতিমন্ত্রী ও সচিব। এরই মধ্যে দুই দেশ থেকে গম আমদানির বিষয়ে মন্ত্রী এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলেও বাদ সাধেন প্রতিমন্ত্রী ও সচিব। গমের মান নিম্নমানের হওয়ায় প্রতিমন্ত্রী ও সচিব এই গম আনতে সম্মতি দেননি বলে ওই মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান। এ ছাড়া খাদ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তার বদলি নিয়েও রয়েছে মন্ত্রীর সঙ্গে তাদের মনোমালিন্য।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছায়েদুল হকের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী নরায়ণ চন্দ্র চন্দের বনিবনা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ছায়েদুল হক অনেক কথাই স্মরণ রাখতে পারেন না। তিনি সব সিদ্ধান্ত এককভাবে নেন।
ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে সচিব শাহ কামালের রয়েছে দ্বন্দ্ব । দু’জনের বাড়ি একই জেলায় হলেও ওই মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবের কারণে কিছুটা মতপার্থক্য চলছে। এ কারণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে চলছে ধীরগতি। বিষয়টি তিক্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগেই ওই কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। কিন্তু মন্ত্রীর পক্ষের ওই কর্মকর্তাকে পুনরায় মন্ত্রণালয়ে বহাল রাখার জন্য মন্ত্রীর দপ্তর থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, মতবিরোধের কারণে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কাছে কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের সচিব অহেতুক দেরিতে ফাইল উপস্থাপন করছেন। কোনো কোনো সচিব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রভাব খাটিয়ে চলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কর্মকাণ্ডে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে খোদ মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। ধীরে চলার অভ্যাস থাকায় ওই সচিবকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ারও অনুরোধ করেন মন্ত্রী। এ ছাড়াও কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের সচিবরা আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচ দিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বিব্রত করছেন। আবার কোনো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
এক সচিব মন্ত্রী-সচিব দ্বন্দ্বের বিষয়টি মানতে নারাজ। তার মতে, দাপ্তরিক কার্যক্রমে সচিব-মন্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। তাছাড়া প্রশাসনের সব বিষয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে রয়েছে। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিব কোথায় কী করেন সব খবরই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *