আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাকিস্তানি যুবাদের দেয়া ২২৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১০ ওভার বাকি থাকতে ৫ উইকেট হারিয়ে ২২৯ রান তুলে সেমির টিকিট নিশ্চিত করে ক্যারিবীয় যুবারা।
১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মাঠে নামবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান উমায়ের মাসুদের লড়াকু ১১৩ বলে ১১৩ রানের ইনিংসে কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যুবাদের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ২২৭ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তানি যুবারা।
এদিন টস জয় দলটির জন্য সুখকর হলেও ব্যাটিংয়ের শুরুটা একেবারেই সুখকর হয়নি। ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে জিশান মালিকরা।
এত স্বল্প সংগ্রহে চাপে পড়া পাকিস্তান ষষ্ঠ উইকেটে উমায়ের মাসুদ ও সালমান ফাইয়াজের ব্যাটে বিপদ এড়ায়। সন্দেহ নেই পাক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান উমায়ের এদিন ব্যাটে যে জবাব ক্যারিবীয়দের দিয়েছেন তা তুলনাহীন। তার ১১৩ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসের সঙ্গে সালমানের ৫৮ রানে ৬ উইকেটে ২২৭ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তানি যুবারা।
আউট হয়ে যাবার আগে এই দুই ব্যাটসম্যান গড়েন অনবদ্য ১৬৪ রানের জুটি।
ক্যারিবীয় যুবাদের হয়ে বল হাতে কেমার হোল্ডার ২টি, সামার স্প্রিংগার, রায়ান জন, কেমো পল ও আলজারি জোসেপ নেন ১টি করে উইকেট।
জবাবে, জয়ের জন্য ২২৮ রানের লক্ষ্যে তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা বেশ ভালই করেন দুই ক্যারিবীয় ওপেনার জিডরন পোপ ও টেবিন ইমলাক।
প্রতিপক্ষের বোলাদের এতটুকু তোয়াক্কা না করে দুর্দান্ত এক একটি শট খেলে দলকে সেমির স্বপ্নটা বেশ ভালই দেখাচ্ছিলেন এই দুই ওপেনার। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে প্রথম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন আহমেদ শফিক।
সপ্তম ওভারে স্পিনার আহমেদ শফিকের দ্বিতীয় বলটি কিছুটা শর্ট ছিল। সেই বলটি উঠিয়ে খেলতে গেলে পয়েন্টে হাসান মোহসিনের হাতে ধরা পড়ে ব্যক্তিগত ২৫ ও দলীয় ৪৫ রানে প্যাভিলনে ফিরে যান জিডরন পোপ।
পোপ ফিরে যাবার পর যেন আরও অদম্য ক্যারিবীয় যুবারা। দ্বিতীয় উইকেটে সিমরন হ্যাটমায়ারকে সঙ্গে নিয়ে টেবিন ইমলাক জুটি গড়েন। দুই টপঅর্ডার দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দলকে টেনে নিয়ে যান। কিন্তু হঠাৎ করেই দলটির আবার ছন্দ পতন হয়। ২০তম ওভারে সাদাব খানের প্রথম বলে স্ট্যাম্পড হয়ে ব্যক্তিগত ৫২ ও দলীয় ১২২ রানে দলকে জয়ের সুবাস পাইয়ে দিয়ে ইনিংসের সমাপ্তি টানেন হ্যাটমায়ার।
হ্যাটমায়ারের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেটে কেসি কার্টিকে নিয়ে জুটি গড়ে সেই সুবাসকে আরও ছড়িয়ে দিতে বেশ ভালই চেষ্টা করেন ওপেনার ইমল্যাক। কিন্তু কেন যেন তার চেষ্টায় বারবারই বাঁধার দেয়াল সৃষ্টি হচ্ছিলো। ৬ ওভার পরে সাদাবের বলে কেসি কার্টি রানের ব্যর্থ চেষ্টা করে মাত্র ৭ রানে ফিরে যান। কার্টি বিদায় নিলে সেমির আশায় চতুর্থ উইকেটে আসেন স্প্রিংগার। জয়ের জন্য ক্যারিবীয় যুবাদের তখন প্রয়োজন ৮৮ রান, হাতে ১৪৭ বল ও ৭টি উইকেট।
এরপরও পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিবীয়দের সেমির আশা যেন স্পর্ধার শামিল হয়ে যাচ্ছিল। কেননা, দলীয় ১৬ রানের ব্যবধানে দুইটি উইকেট হারানোর পর এই উইকেটে দলের ১০ রান যোগ করে ব্যক্তিগত ৫৪ রানে প্যাভিলনে ফেরেন ক্যারিবীয়দের সেট ব্যাটসম্যান টেবিন ইমল্যাক।
তার ফিরে যাবার পর যেন গোটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবির স্তম্ভিত। সেমির এত কাছে এসেও ছিটকে যাবার ভয় তাদের মনের এক গহীন কোণে যেন বেদনার ঝড় তুলছিল। এমন অবস্থায় পঞ্চম উইকেটে স্প্রিংগার ও জিড গুলি দুই প্রান্তে থেকে দলের হাল বেশ শক্ত হাতেই ধরেন।
এদিকে কম যাননি পাকিস্তানি যুবারাও। বল হাতে যেমন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ঘায়েল করতে চেয়েছেন তেমনি ফিল্ডিংয়েও। লাফিয়ে পড়ে, ঝাঁপিয়ে পড়ে, ডাইভ দিয়ে সব ভাবেই দলটির যুবাদের সেমিতে উঠার চেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই প্রচেষ্টায় বলতে গেলে দলটি সফল হয়েছে। কেননা ৩৫তম ওভারে পেসার সামিন গুলের চতুর্থ বলটি স্পিংগার আকাশে উঠিয়ে দেন। কাভার অঞ্চল থেকে বলটি তালুবন্দি করে ব্যক্তিগত ৩৭ রানে তাকে ফিরিয়ে দেন।
স্প্রিংগারের বিদায়ের পর ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে কেমো পল’কে সঙ্গে নিয়ে লড়েছেন জিড গুলি। আর তাদের এই লড়াকু ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ২২৯ রান সংগ্রহ করে টুর্নামেন্টের শেষ চার নিশ্চিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
কেমো পল ২৪ ও জিড গুলি ছিলেন ২৬ রানে অপরাজিত। পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে সামিন গুল, আহমদ শফিক ও সাদাব খান নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।