পাটের বস্তায় ঘৃতাহুতী, চাল-ডালের বাজারে আগুন

অর্থ ও বাণিজ্য

 

 

2016_02_07_23_54_05_YZnxwOKnTHLzeWHU5lfXJgyvgmaab1_original

 

 

 

 

ঢাকা : চলতি বছরের শুরুতে যে সরু চাল প্রতিকেজি বিক্রি হতো ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় তা চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা থেকে ৫৬ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজি চালে বেড়েছে ৪ টাকা থেকে ৬ টাকা। শুধু সরু চাল নয় বাজারে সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। চালের পাশাপাশি ডালের বাজারেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবির)-এর হিসাব মতে, মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজি সরু চালের দাম ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ, মিনিকেটে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং নাজিরশাইল চালে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ দাম বেড়েছে।

সংস্থাটির হিসাব মতে আরো জানা যায়, চলতি বছরের শুরুতে ৭ জানুয়ারির সরু চালের দাম ছিল ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, যা চলতি সপ্তাহে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা থেকে ৫৬ টাকায়। একমাস আগে মিনিকেট ৪০ টাকা থেকে ৪৬ টাকা, নাজিরশাইল প্রতিকেজি ছিল ৪৬ টাকা থেকে ৫২ টাকা। চলতি সপ্তাহে মিনিকেট ৪৪ টাকা থেকে ৪৮ টাকায় এবং নাজিরশাইল ৪৮ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সংস্থাটি চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ জানাতে পারেনি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কারণে এক দফা চালের দাম বেড়েছে। এখন মৌসুমের শেষ সময়ে ধানের দাম বেড়েছে, যার প্রভাবে চালের দাম বাড়তি। তবে নতুন ধান উঠা শুরু করলে চালের দাম কমবে বলে জানান তারা।

সরেজমিনে বাজারে গিয়ে দেখা গেছে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মানভেদে ভালো মানের নাজিরশাইল ৪৮ টাকা থেকে ৫৬ টাকায়, মিনিকেট ৪৪ টাকা থেকে ৪৮ টাকায়, পাইজাম ও লতা ৪০ টাকা থেকে ৪৪ টাকা, স্বর্ণা ৩২ টাকা থেকে ৩৪ টাকায়, বি আর ২৮ চাল ৪০ টাকা থেকে ৪৪ টাকায়, মোট চাল ২৯ টাকা থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকাররা দাম বাড়িয়েছে। ফলে খুচরা পর্যায়েও চালের দাম বাড়তি। এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পর চালের দাম বেড়েছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মোকামে চাল মজুদ করেও দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী হানিফ দেওয়ান বাংলামেইলকে বলেন, ‘পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সঙ্গে সঙ্গে চালের দাম বস্তা প্রতি ১০০ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়।’ আর এখন ধানের দাম বাড়তি অজুহাতে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়েছে বলে জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাহিদ অ্যারোমেটিক অটোরাইচ মিলের সত্ত্বাধিকারী আহম্মেদ আলী সরদার বাংলামেইলকে জানান, চালের দাম দুই কারণে বেড়েছে। কিছুদিন আগে যখন সরকার পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে তখন প্রতি বস্তা চালে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বাড়ে। অপরদিকে বর্তমানে ধানের দাম বেশি থাকায় চালের দাম বাড়তি।

তবে চালের দাম বাড়ার বিষয়ে যে যাই বলুক না কেন এসব যুক্তি মানতে নারাজ ভোক্তারা। তাদের মতে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা বাজার তদারকি করছে না বলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো চালের দাম বাড়িয়েছে। তাই ভোক্তারা বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বেলাল আহমেদ। তিনি পরিবার নিয়ে তেজতুরী বাজার এলাকায় বসবাস করেন। কাওরান বাজারের ঢাকা রাইচ এজেন্সি থেকে চাল কেনেন তিনি। বললেন, ‘কিছুদিনের ব্যবধানে চালের দাম একাধিকবার বেড়েছে। আসলে সঠিক মনিটরিং না থাকার কারণেই এভাবে বাড়ছে চালসহ অন্যান্য পণ্যের দাম। সংশ্লিষ্টরা বাজার মনিটরিং ঠিক মতো করলেই এমনটি হতো না।’

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র বাজার মনিটরিং কমিটির কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বাংলামেইলকে জানান, আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করি। বিশেষ করে রমজান মাসে আমরা মনিটরিং ব্যবস্থার উপর জোর দেই। এছাড়া বছরের অন্যান্য সময় বাজার মনিটরিংয়ের প্রয়োজন পড়ে না।

এদিকে বাজারে ডালের দামও ঊর্ধ্বমুখি। খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়, খেসারী ডাল ৫৫ টাকায় ৬৫ টাকায়, অ্যাংকর ডাল ৪০ টাকায়, দেশি মুগ ডাল ৮৫ টাকা থেকে ১২০ টাকায়, ভারতীয় মসুর ডাল ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির হিসাব মতে, চলতি সপ্তাহে প্রতিকেজি মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা থেকে ১৪৫ টাকায় (এক মাস আগে বিক্রি হতো ৯৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকায়)। নেপাল থেকে আমদানি করা ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকায় (এক মাস আগে বিক্রি হতো ১৩৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকায়)। এক মাসের ব্যবধানে মশুর ডাল প্রতিকেজিতে ৫ টাকা বা ২ দশমিক ১৩ শতাংশ দাম বেড়েছে, নেপালি ডালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা বা ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

ডাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, এখন সিজন শেষ দিকে। চাহিদানুযায়ী ব্যবসায়ীদের কাছে ডাল নেই। আমদানি কম। তবে বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ডালের মজুদ রেখেছে। এতে বাজারে ডাল সঙ্কট চলছে। যারা মজুদ করেছে তারাও চড়া দামে বিক্রি করছে। এসব কারণে ডালের দাম বাড়তি বলে জানান তারা।

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বাংলামেইলকে জানান, ব্যবসায়ীদের কাছে পুরাতন ডালের মজুদ কম। সিজন শেষ হওয়ায় ক্রাইসিস চলছে। তবে নতুন ডাল ওঠা শুরু করলে ডালের দাম কমবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *