বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বলেছেন, সব ধর্মই নারী বিদ্বেষী। কেরালা সাহিত্য উৎসবে যোগ দিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ২০০৫ সালের পর এই প্রথম তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লির বাইরে গেলেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন দ্য হিন্দু লিখেছে, তসলিমা নাসরিন বলেছেন: সরকার থেকে ধর্মকে আলাদা রাখতে হবে। ধর্মের ওপর ভিত্তি করে আইন হওয়া উচিত নয়। ৭ম শতাব্দীর আইন এই একবিংশ শতাব্দীতে চলতে পারে না। আইন প্রণয়নে ধর্ম কিভাবে বাংলাদেশে মুসলিম ও হিন্দু নারীদের ওপর নিষ্পেষণ করে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভারতে সমতার ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তাই সেখানে নারীদের অবস্থা তুলনামুলক ভাল। ভারতকে তিনি অসহিষ্ণু দেশ হিসেবেও মনে করেন না। তসলিমা বলেন, আমি মনে করি ভারতের বেশির ভাগ মানুষ একে অন্যের ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি সহিষ্ণু। ভারতে অসহিষ্ণুতাকে সমর্থন করে না আইন। তা সত্ত্বেও ভারতে অনেক মানুষ আছেন, যারা অসহিষ্ণু আচরণ করেন। কেরালার কোজিকোড়িতে হচ্ছে এই সাহিত্য উৎসব। সেখানে লেখক কে শচিনানন্দের এক জিজ্ঞাসার জবাবে তসলিমা নাসরিন বলেন, কেন ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষরা শুধু হিন্দু কট্টরপন্থিদের নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কেন মুসলিম কট্টরপন্থিদের নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ভুয়া ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর ভিত্তি করে যে গণতন্ত্র তা মোটেও সত্যিকার গণতন্ত্র নয়। ভারতে প্রকৃতপক্ষে যে সংঘাত চলছে তা হলো ধর্মনিরপেক্ষ ও কট্টরপন্থিদের মধ্যে, নতুন ধ্যানধারণা ও পুরনো প্রথার মধ্যে, মানবতা ও বর্বরতার মধ্যে, স্বাধীনতার মূল্যবোধে বিশ্বাস করে এমন মানুষ ও এর বিপরীত অবস্থানের মানুষের মধ্যে। এ সময় তিনি দাদ্রিতে গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে পিটিয়ে আখলাক নামে এক মুসলিমকে হত্যার নিন্দা জানান। এর প্রতিবাদে বুদ্ধিজীবিরা তাদের সম্মাননা ফিরিয়ে দেন। তসলিমা এমন ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন। বাংলাদেশে ভাল নারী লেখিকা না থাকায় তিনি অনুতাপ প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন পুরুষরা। তিনি বলেন, নারী লেখিকাদের উচিত হবে না পুরুষ লেখকের ভীতির কারণ হওয়া। তাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। তাদের অনুভূতি ভিন্ন। নারীরা যদি তার নিজের সঙ্গে কথা বলেন তাহলে তারা বড় লেখিকা হতে পারবেন।