নেই কোন যোগাযোগের মাধ্যম। কেড়ে নেয়া হয়েছে ল্যাপটপ। একই কক্ষে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে ১৮০ জনকে। নেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। যেন এক অন্ধকার গহ্বর। সার্বক্ষণিক প্রহরায় আছে বন্দুকধারীরা। খাবার পাচ্ছেন না নিয়মিত। দালালদের খপ্পরে পড়ে বেঁচে থাকা এখন অনিশ্চিত তাদের। ক্যারিয়ার ওভারসিজ নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সম্প্রতি ইরাকে পাড়ি জমান বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ১৮০ জন কর্মী। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীও রয়েছেন। তবে জিম্মি দশার শিকার ওই সব কর্মীর পরিবারের অভিযোগ তাদেরকে কাতার নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বিমান বন্দরে নিয়ে কৌশলে কনট্রাক্ট পেপারে স্বাক্ষর করিয়ে ইরাকে পাঠিয়েছে। যশোরের বাসিন্দা জাবেদ আহম্মেদ মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর-এ প্রেরিত এক আবেদনপত্রে জানান, গত ২২শে মে তার ভাই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মো. সিদ্দিকসহ ১৭৯ জন কর্মী ওই রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ইরাকের নাজাব আবু তোরাব নামে একটি হাউজিং কোম্পানিতে কাজ নিয়ে দেশ ছাড়েন। কিন্তু যে সব সুযোগ-সুবিধার কথা বলে এজেন্সি তাদের পাঠায় তার কিছুই পায়নি। বাংলাদেশে যোগাযোগের জন্য ওই কোম্পানি তাদের যে সিম কার্ড দিয়েছিল এখন সেগুলোও ফেরত নিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করিয়েছে। অনেকদিন থেকে তাদের কোন কাজ নেই। অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন। এ ব্যাপারে রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করলে জানায়, সেখানকার কিছু খাবার-দাবারের ভিডিও দেখায়। কিন্তু পরে তার ভাই কৌশলে যোগাযোগ করে বলে মাসের প্রথম দিন তাদের যে খাবার দেয়া হয় সেটাই ভিডিও করে পাঠিয়েছে। রাইটস যশোর এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ৯ই জুলাই বাংলাদেশের বাগদাদ দূতাবাসকে চিঠি দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এদিকে যশোরে কয়েকটি গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় শুক্রবার রাতে তাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপও কেড়ে নিয়েছে। রুম থেকে বের হলেই গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। বর্তমান খাবার-দাবার সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে বলে সিদ্দিকের ছোট ভাই জাবেদ জানিয়েছেন। গতকাল ফোনে কথা বলার সময় শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন এখন কি করব কোন কূলকিনারা পাচ্ছি না। তাদের সঙ্গে জিম্মি ময়মনসিংহের বাসিন্দা জুয়েলের মা জানান, ঈদের তিন দিন আগে ছেলের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। ওই সময় জুয়েল তাকে জানায়, ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। কাজ দিচ্ছে না।
এমন কি চাকরির কোন কাগজপত্রও তাদের কাছে নেই। দুপুরে কোন রকমে বেঁচে থাকার মতো খাবার দেয়। তিনি বলেন, ওই দিনের পর থেকে ছেলের সঙ্গে আর কথা হয়নি। তিনি আরও জানান তিন মাস আগে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে তার ছেলে গেছে। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই কেঁদে ফেলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া গ্রামের আলমাসের মা। তিনি জানান, ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা সুদে ঋণ করে ছেলেকে বিদেশ পাঠানো হয়েছে। এখন গ্রামের লোক চাপ দিচ্ছে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য। কোথা থেকে টাকা দেব? এখন পর্যন্ত কোন কাজ দেয়নি, যোগাযোগও নেই তার সঙ্গে। জিম্মি আরেকজন ফুরকান আলীর ভাই শহর আলী জানান, বুধবার এক দারোয়ানের ফোন দিয়ে কৌশলে ফোন করেছিল তার ভাই। তারপর থেকে আর কোন যোগাযোগ নেই। ওই সময় সে বিভিন্ন দুর্ভোগের কথা বলে। অস্ত্রধারী পাহারাদাররা তাদের গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। এছাড়া অনেকেই অভিযোগ করেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ইরাক গমনে যে খরচের কথা বলা হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি টাকা নিয়েছে এজেন্সি। তাদের বেশির ভাগেরই ইরাক যেতে খরচ হয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এছাড়া বিমানবন্দরে তাদের কাছ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়, সেখানে প্রথম মাসের খরচ বাবদ। এদিকে ক্যারিয়ার ওভারসিজের এমডি বদরুল আমিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইরাকের যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতির কারণে মূলত এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কাজ না পাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এখনও ওই প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়নি। অতিরিক্ত টাকা নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা কথা। সেখানকার দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সব ভুলে এখন সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি। ল্যাপটপ কেড়ে নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন এ ধরনের কোন ঘটনা এখনও শুনিনি। দূতাবাসের মাধ্যমে সব সময় সেখানে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্ত এজেন্সির বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। অপরদিকে রাইটস যশোর-এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ বলেছেন এখন পরিস্থিতি আগের থেকেও খারাপ। তিনি অভিযোগ করেন দূতাবাসে ফোন করে কাউকে পাচ্ছেন না।
সূত্র মানবজমিন