ঢাকা : চা দোকানী বাবুল মাতুব্বরের অগ্নিদগ্ধের ঘটনার ৪ ঘণ্টার মধ্যে দায়েরকৃত মামলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট অভিযোগ করা হচ্ছে, বাবুলের চিকিৎসা নিয়ে যখন পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত ছিল, তখন পুলিশ ব্যস্ত হয়ে উঠে মামলা করা নিয়ে। রাত ৯টায় ঘটনার পর প্রায় ৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ মামলটি নথিভুক্ত করে। যেখানে অনেক সময় হত্যার ঘটনায়ও মামলা নথিভুক্ত করতে পুলিশকে কালক্ষেপণ করতে দেখা যায়।
নিহতের স্বজনরা বারবার যেখানে এ ঘটনায় শাহ আলী থানার এসআই শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারের নাম বলছে সেখানে মামলায় কোনো পুলিশ সদস্যের নামই নেই। তাই নিহতের পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে আরকেটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে একাধিক মামলা নেয়ার নিয়ম নেই। এদিকে অভিযুক্ত এসআই তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকবার করেছে।
বাবুলের মেয়ে লাবণী আক্তার ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা থানায় গিয়েছিলাম পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে, কিন্তু মামলা নেয়নি। পুলিশের নাম বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে মামলা রেকর্ড করে।’ ঘটনার পর পুলিশ অগ্নিদগ্ধ বাবুলকে হাসপাতালের বদলে থানায় নিয়েছিল বলে জানান তার এই মেয়ে।
লাবনী বলেন, ‘পুলিশ আমার বাবাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করেনি। আমরাই পরে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’ পুলিশের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করবেন বলেও জানান লাবণী।
তবে একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলামেইলকে বলেন, ‘একই ঘটনায় একাধিক মামলার সুযোগ নেই। ওই মামলাটিই এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। যেহেতু পুলিশের দু’টি তদন্ত কমিটি হয়েছে। সেখানে পুলিশের কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আসামি হতে হবে। পাশাপাশি অন্য কেউ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তাদেরও আসামি করা হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেলে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন (তখন পর্যন্ত) বাবুলের ছেলে রাজু জানিয়েছিলেন, এসআই শ্রীধাম ঘটনার দিন বেলা ১টায় এবং রাত ১০টার দিকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের চায়ের দোকানে আসেন। এসময় তার সাথে সোর্স দেলায়ার এবং কয়েকজন কনস্টেবলও ছিল।
দুপুরে বাবুলের মৃত্যুর পর রাজু ঢাকা মেডিকেলে উপস্থিত অনেকের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বাবাকে মেরে ফেলেছেন শাহ আলী থানার পুলিশ ও সোর্সরা। আমার বাবার কি অপরাধ? ফুটপাতে চা বিক্রি করেন, পুলিশকে চাঁদা দিতে পারেননি? আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শাহ আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদারের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য ও পুলিশের সোর্স তার গায়ে আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। আমরা দুই ভাই ও তিন বোন এতিম হয়ে গেলাম। আমরা এই হত্যার ঘটনায় ন্যায় বিচার চাই।’
ডিএমপির মিরপুর জোনের উপ-কমিশনার কাইয়ুমুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কেউ মৌখিকভাবে কিছু বল্লেই তো হলো না, আমাদের কাছে ডকুমেন্ট থাকতে হবে। তবে যে বা যারাই এ ঘটনায় জড়িত থাকুক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে অভিযুক্ত এসআই শ্রীধাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘ঘটনার দিন আমার ওই এলাকায় ডিউটি ছিল কিন্তু আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’
‘তাহলে আপনার নাম কেন বলছে বাবুলের ছেলে?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে শ্রীধাম বলেন, ‘আমি ওই এলাকায় অনেকদিন ধরে আছি, আমাকে অনেকেই চিনে। তাই হয়তো আমার নাম বলছে।’
এসআই শ্রীধাম আরো বলেন, ‘তারা (বাবুলের পরিবার) রাতে থানায় এসে জানিয়েছে যে, আমি সেখানে ছিলাম না, এখন তারা ভুল বলছে।’
এদিকে এ ঘটনায় শাহ আলী থানার চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জসিম উদ্দীন মোল্লা (প্রশাসন) জানান, চারজনের মধ্যে দুইজন উপ-পরিদর্শক, একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক ও একজন কনস্টেবল। এরা হলেন- উপ-পরিদর্শক মোমিনুর রহমান খান এবং নিয়াজ উদ্দিন মোল্লা, সহকারী উপ পরিদর্শক দেবেন্দ্র নাথ এবং কনস্টেবল জসিম উদ্দিন।
এখানে প্রশ্ন উঠছে, মামলায় কোনো পুলিশ সদস্যের নাম নেই, তাহলে এই চার পুলিশকে কেন প্রত্যাহার করা হলো?
বাবুলের মেয়ে ঘটনার দিন রাত দেড়টায় শাহ আলী থানায় যে সাতজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন তারা হলেন- পারুল, দেলোয়ার, আইয়ুব আলী, রবিন, শংকর, দুলাল হাওলাদার, পারভীন এবং অজ্ঞাত আরো ২/৩ জন। তবে লাবণী বলেন, ‘আমাদের দিয়ে তড়িঘড়ি করে মামলাটি করিয়েছে পুলিশ। তখন আমরাও বিষয়টি বুঝতে পারিনি। আমরা এবার পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবো।’
উল্লেখ্য, বুধবার মিরপুর ১ নম্বর গুদারাঘাটে চাঁদা না পেয়ে পুলিশ চা বিক্রেতা বাবুলের চায়ের দোকানের কেরোসিনের চুলায় বাড়ি মারলে কেরোসিন ছিটকে তার গায়ে আগুন ধরে যায়। আজ দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবুল মাতব্বর মৃত্যুবরণ করেন।