দু’দলেই পরিবর্তন আসছে

Slider বাংলার মুখোমুখি রাজনীতি

1454261962_p-22

 

পরিবর্তন আসছে দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। সময়ের চাহিদায় এ পরিবর্তন দলীয় গঠনতন্ত্র, সাংগঠনিক কাঠামো এবং নেতৃত্বে। উভয় দলেই শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন না হলেও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আসছে নতুন মুখ। সমুলে বাদ যাচ্ছে না প্রবীণরাও। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই পরিবর্তন আনার বিধান রয়েছে দলীয় গঠণতন্ত্রেই। এ লক্ষ্যেই উভয় দলে জাতীয় কাউন্সিলের ব্যাপক প্রস্তুতি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের কাউন্সিলের সময়সূচী ঘোষণা করেছে। ২৮ মার্চ। প্রস্তুতি নিলেও দিনক্ষণ ঘোষণা করেনি বিএনপি। তবে কার্যক্রম চলছে মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহকে ঘিরেই। ১৯ মার্চ তাদের সম্ভাব্য তারিখ। এদিকে কেন্দ্রে কাউন্সিল ঘিরে সারা দেশে উভয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রতিযোগিতামূলক নেতৃত্ব উপহার দিতে জেলা পর্যায়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাতে দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত পদ অর্জন করতে লবিং-তদ্বির শুরু করেছে প্রত্যাশিরা। আর টিকে থাকার যারপর নাই কৌশলী ভূমিকায় বর্তমান নেতারা। শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ সাংগঠনিক যোগ্যতা, দক্ষতা আর আদর্শের প্রতি অবিচল নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করতে হবে নেতৃত্ব। তৃণমূলের পাশাপাশি সময়োপযোগী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও শক্তিশালী কমিটি গঠনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার অবর্তমানে তারেকই শীর্ষ নেতা : নতুনের পালে হাওয়া সৃষ্টি করা হচ্ছে একাধিক উপ-কমিটি : সুশীল সমাজের সদস্যদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে আফজাল বারী : তিনযুগের বিএনপি আসছে নবরূপে। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে। নেতৃত্ব আর সাংগঠনিক কাঠামোও অনেকটাই বদলে যাচ্ছে। বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে প্রায় সব কমিটিতেই। দলের প্রতি আনুগত্য আর আন্দোলন সংগ্রামের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতাদের সম্মানিত করতে একাধিক উপ-কমিটি সৃষ্টি করা হচ্ছে। গুরুত্ব পাচ্ছে নারী নেতৃত্ব বিকাশেরও। বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রাখা সুশীল সমাজের দক্ষিণপন্থী সদস্যদের বিএনপির পরামর্শক কমিটিতে রাখার চিন্তা রয়েছে দলীয় প্রধানের। মোদ্দাকথা এবারের কাউন্সিলের দোলা লাগবে নতুনদের পালে। একই সাথে বিষাদের কালো ছায়া ভাসছে দলের দুর্দিনে বিপরীত মেরুতে কৌশলী অবস্থান নেয়া নেতাদের জন্যও। পরিবর্তনের হাওয়ায় ঝরে যাচ্ছে কমিটির অর্ধেক সংখ্যক নেতা। পিচ্ছিল রাজপথের সুসংবাদ আর দু:সংবাদ নিয়েই আগামী মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রস্তুতি চলছে জোরেসোরে। মার্চ মাসের মধ্যভাগেই জেলা পর্যায়ের কাউন্সিল শেষ করা হবে। এরপরই জাতীয় কাউন্সিল। সম্ভাব্য তারিখ ১৯ মার্চ। ইতোমধ্যে নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের ভাইস-চেয়ারম্যান বিচারপতি টি এইচ খান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ইশতেহার ঘোষণা করবেন শিগগিরই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচন করা হবে। ভোটের মাধ্যমেই গত পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম। তার সাথে আছেন ড. আব্দুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটির সাথে সম্পৃক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপির বয়স তিনযুগেরও বেশি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সম্পৃক্ত থাকা সংগঠনের অনেক নেতাই এখন শ্রম ও মেধাদানে অপারগ। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আগামী তিন যুগের জন্য নেতৃত্ব উপহার দিতে বর্তমান চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বদ্ধপরিকর। তিনি ছাত্রদলের আসন্ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কঠোরতা প্রকাশ করেছেন, বলেছেন, ছাত্রত্ব নেই এমন ছাত্রনেতাকে কোনভাবেই ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান দেয়া যাবে না। যে কারণে ঝুলে আছে পুর্নাঙ্গ কমিটি। তার এমন মনোভাব কেন্দ্রীয় কমিটির বেলাতেও। তাই বিভিন্ন কমিটিতে পুরনোদের সাথে নতুনদের সমন্বয় করা হবে। অবশ্য তাতে তারুণ্যের আধিক্য থাকবে। এবার দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যানের হাতে আরো গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত করা হবে। চেয়ারপার্সনের অনুপস্থিতিতে তাকেই শীর্ষ নেতার হাল ধরতে হবে। বিলুপ্ত করা হচ্ছে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিবের পদটিও। মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকারী (ভারপ্রাপ্ত) মির্জা ফখরুল ইসলামকেই আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসচিব নির্বাচিত করা হবে। সূত্রমতে, নির্বাহী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ৯০’এর আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালনকারী এবং দলের সাবেক ছাত্রনেতাদের গুরুত্ব দেয়া হবে। সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ওই সকল নেতাদের একটি তালিকাও করেছেন বিএনপি প্রধান। নতুন কমিটিতে তাদের পদ দেয়া হবে। দলের বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন ৭ জন যুগ্ম-মহাসচিব থাকছে। এই তালিকায় নতুনদের মধ্যে মজিবর রহমান সরোয়ার, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবীব উন নবী খান সোহেলের নাম শোনা যাচ্ছে। ৮ বিভাগের দায়িত্বে ৮জন সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হবেন। ৯০-এর আলোচিত সাবেক ছাত্রনেতা সানাউল হক নীরু ও তার সময়কার ছাত্রনেতাদের হাতেই যাচ্ছে বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। বর্তমানের ৩৮৬ সদস্যের বর্তমান নির্বাহী কমিটির আকার ছোট করে তাতে উপ-সম্পাদক পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাবেক ছাত্রনেতাদের পদগুলোতে স্থান হচ্ছে। এছাড়াও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, অতীত লড়াই-সংগ্রামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকা নেতাদের অনেকেই চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পাচ্ছেন। এই কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ও সাদেক হোসেন খোকাকে স্থায়ী কমিটিতে নেয়ার কথা চাউর আছে দলের ভেতরে-বাইরে। এছাড়াও উচ্চশিক্ষিত, ব্যবসা ও বর্হিবিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে লবিং আছে এমন নেতাদের গুরুত্বপূর্ন পদে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে শীর্ষ নেতার। বার্ধক্যজনিত ও নিস্ক্রিয়তার অভিযোগে কিছু নেতা স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ ও নির্বাহী কমিটি থেকে বাদ পড়বেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন-দলের স্থায়ী কমিটির কয়েক সদস্য। এরা জেল-জুলুম থেকে গা বাঁচাতে এবং দলীয় প্রভাবেই অর্জিত সম্পদ রক্ষা করে নিষ্কন্টকভাবে একলা চলেছেন। গণমাধ্যমের সাথে সু-সম্পর্ক রাখতে চেয়ারপার্ননের প্রেস উইংয়ের আকার বাড়ানো হবে। তাতে সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ-এর নেতৃত্বে আরো চারজন সিনিয়র সাংবাদিক এই উইংয়ের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পাচ্ছেন। একই সাথে দলীয় দফতরেও দক্ষদের সম্পৃক্ত করে দফতর সম্পাদক ছাড়াও সহ-দফতরের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটির কাছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ইনকিলাবকে বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে দল আরো সুসংগঠিত হবে। তাতে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, সৎ, যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। নির্যাতনে নিস্পেষিত নেতাকর্মীরা সুবিধাবাদী ও নিষ্ক্রিয়দের দেখতে চান না। জেলা পর্যায়ের কাউন্সিল শুরু আগামী সপ্তাহেই : দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপির জেলা কাউন্সিল। সিলেট জেলা দিয়ে কাউন্সিল শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে জেলা কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ, খুলনা মহানগর, খুলনা জেলা, বাগেরহাট, মেহেরপুর, রাজশাহী জেলা ও মহানগর, নওগাঁ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, ঝালকাঠি, শরীয়তপুর ও ফরিদপুর জেলার সম্মেলন আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে দলের সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন জানিয়েছেন।   – See more at: http://www.dailyinqilab.com/details/2525/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%A8-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E2%80%99%E0%A6%A6%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%87#sthash.UX5FYyvU.dpuf

Copyright Daily Inqilab

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *