ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এবং দোয়েল চত্বরে অপেক্ষা করছেন হাজার খানেক মানুষ। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৫টা ৪৬। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন এবং পরিদর্শন শেষে মাত্রই চলে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাথে সাথে উন্মুক্ত করে দেয়া হলো মেলায় প্রবেশের সবগুলো দ্বার। এর সাথে সাথেই যেন খুলে হাজার হাজার নতুন বইয়ের মলাট। অপেক্ষার প্রহর শেষ হল বইপ্রেমীদের। এরপরই প্রতিযোগিতা শুরু কে কার আগে মেলায় প্রবেশ করতে পারে। মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার পর্দা ওঠার দিনে আজ ছিল এমনই চিত্র।
বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে এবারের মেলা সবার কাছেই বিশেষ গুরুত্ববহ। সেজন্যে এবার ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী’ শীর্ষক গ্রন্থমেলার মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বর্ধমান হাউজের পাশে আয়োজন করা হয় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। সেখানে মাসব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ ছাড়াও গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্রন্থমেলা একযোগে চলবে। গতবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার বর্গফুটের বিশাল এলাকাজুড়ে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথম দিনেই আজ বইপ্রেমী দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। মেলার দ্বারগুলো খোলার সাথে সাথেই হাজার খানেক দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেন। সময় গড়িয়ে সন্ধ্যার নামার সাথে সাথেই এ সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছিল। তবে প্রথম দিনে উৎসুক এবং দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানালেন। বই ক্রেতার সংখ্যা ছিল একেবারেই হাতেগোনা।
এত অপেক্ষা এত আয়োজন, তবুও মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে বইয়ের ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যেন কিছুটা হতাশই হতে হলো। মেলার দ্বার খুললেও উভয় অংশেই অধিকাংশ স্টল ছিল অগোছালো। অনেক স্টলের নামফলকও তখন পর্যন্ত লাগানো হয়নি। কিছু স্টলে আজ সন্ধ্যা নাগাদ কোনো বই দূরে থাক, স্টল সংশ্লিষ্টদেরই দেখা মেলেনি। কয়েকটি স্টলে শ্রমিকদের কাজ করতেও দেখা গেল।
কয়েকটিতে বইয়ের পরিবর্তে সামনে ঝুলছিল পর্দা। সন্ধ্যার পরে অধিকাংশ স্টলেই বই সাজাতে দেখা গেছে। তবে মেলার প্রথম দিনে গুছিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগে বলেই জানালেন স্টল সংশ্লিষ্টরা।
নিরাপত্তার জাল : গত কিছুদিন ধরেই বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে নানা মহলে চলছিল আলোচনা। গতবারের গ্রন্থমেলার বাইরে ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতেই এত আলোচনা সমালোচনা। ফলে পুলিশ এবং বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে এবার কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তার তার মহড়াও দেখা গেল আজ। প্রবেশপথগুলো আর্চওয়ে বসানোর পাশাপাশি কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার থেকে মেলা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মোতায়েন রয়েছে বিপুল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য।
খোলা জায়গায় স্বস্তি : বাংলা একাডেমির বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আরো দু’বছর আগে। এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মেলার পরিসর প্রায় দ্বিগুন করা হয়েছে। শিশুতোষ গ্রন্থের স্টলগুলোও নিয়ে যাওয়া হয়েছে উদ্যানে। ফলে সেখানে কলেবর বৃদ্ধির সাথে খোলা জায়গাও অনেক বেড়েছে। এতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের বেশ স্বস্তির সাথেই মেলা প্রাঙ্গনে ঘুরে সময় নিয়ে বই কিনতে পারবেন বলে মনে করছেন প্রকাশকেরা।
মঙ্গলবারের অনুষ্ঠান : অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় দিনে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী : বাংলা একাডেমিকে ফিরে দেখা শীর্ষক সেমিনার’। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শফিউল আলম। আলোচক থাকবেন ফজলে রাব্বি, আজিজুর রহমান আজিজ, বেগম আকতার কামাল এবং মোহিত কামাল। সভাপতিত্ব করবেন মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। এছাড়া সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ওদিকে এবারের মেলায় ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটির (ডিআরইউ) পক্ষ থেকে একটি আলদা স্টল নেয়া হয়েছে। আগামীকাল দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্টলের উদ্বোধন করা হবে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু স্টলের আনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত তাকবেন।
ছাত্রদলের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ : ওদিকে বইমেলার উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আকরামুল হাসান আজ এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান।
তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অঙ্গন মেধার চারণ ভূমি ও গণতন্ত্র চর্চার সূতিকাগার। যেকোনো গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তাই এ পবিত্র ক্যাম্পাসে বর্তমান সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা প্রবেশের নৈতিক অধিকার রাখেন না।
বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা একাডেমিতে প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রতিবাদে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল করেছে ছাত্রদল। নীলক্ষেত মোড় হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে আয়োজিত মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা মনিরা আক্তার রিক্তা, আসাদুজ্জামান আসাদ, মিয়া মোঃ রাসেল, মিজানুর রহমান সোহাগ, ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজ, শওকত আরা উর্মি, শাহিনুর নার্গিস, মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া, আরাফাত বিল্লাহ খান, আবুল বাশার সিদ্দিকী, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন প্রমুখ।