গ্রাম বাংলা ডেস্ক: জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাস্তবায়ন না করার দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগররিক-সুজন। শনিবার সংগঠনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, নানা আলোচনা ও সমালোচনার পর সরকার গত ৫ আগস্ট ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪’ অনুমোদন করেছে। যদিও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ এ নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ নীতিমালায় সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচারে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যেমন, সশস্ত্র বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোন বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ বা অবমাননাকর দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না, অপরাধীদের দন্ড দিতে পারেন এমন সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার মত দৃশ্য বা বক্তব্যও প্রচার করা যাবে না, জনস্বার্থ বিঘিœত হতে পারে এমন কোন বিদ্রোহ, নৈরাজ্য ও হিংসাত্মক ঘটনা প্রচার করা যাবে না ইত্যাদি। নীতিমালায় জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হলেও সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছেÑ কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার সম্পর্কিত সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আবার কমিশন হলেও তার কাজ হবে তদন্ত করে সুপারিশ করা। শাস্তির ক্ষমতা সরকার তার নিজের কাছেই রেখেছে। ফলে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের েেত্র শেষ কথা সরকারেরই।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার আইনগত কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, আমাদের সংবিধান বলছে আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, নীতিমালা দ্বারা নয়। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ কেবলমাত্র আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেে বাক্-স্বাধীনতা ও সংবাদেেত্রর স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে। সুতরাং গণমাধ্যমের ওপর কোন বাধা-নিষেধ আরোপ করতে হলে তা অবশ্যই আইন প্রণয়ণের মাধ্যমেই করতে হবে।
সুজন মনে করে যে, এই নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর ওপর তথ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়বে, এ মাধ্যমের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হবে। এছাড়াও নীতিমালাটির বেশকিছু ধারা অস্পষ্ট এবং স্পর্শকাতর। যেমন, অবমাননা, বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ও শক্রুতা এবং ইতিহাস বিকৃতি ইত্যাদি বিষয়সমূহ স্পষ্ট নয়। ফলে এ বিষয়গুলো অপব্যবহারেরও আশঙ্কা রয়ে যায়।
গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো সম্প্রচার কমিশন গঠনের। কিন্তু সরকার কমিশন গঠনের আগেই ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা’ অনুমোদন করেছে। এরফলে শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার এককভাবে তথ্য মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে, যা গণমাধ্যমের জন্য মঙ্গলজনক হবে না বলে আমরা মনে করি।
তাই যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের আগে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সাথে অসংগতিপূর্ণ ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪’ বাস্তবায়ন না করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।